২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ সকাল ৮:০২

নিজ গ্রামে একসঙ্গে মিন্টু-আজিজুলের জানাজা, দাফন পাশাপাশি

সোনার সিলেট ডেস্ক
  • আপডেট মঙ্গলবার, অক্টোবর ৫, ২০২১,

ফাঁসি কার্যকরের পর একসঙ্গে জানাজা শেষে মিন্টু ও আজিজকে নিজ গ্রামে পাশাপাশি দাফন করা হয়েছে।

সকালে আশপাশের গ্রামের অনেক নারী-পুরুষ মিন্টু ও আজিজের বাড়িতে আসেন। কেউ কেউ দেখতে যান তাদের কবর।

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার জোড়গাছা গ্রামের কমেলা খাতুন ও তার বান্ধবী ফিঙ্গে বেগমকে ২০০৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রায়লক্ষ্মীপুর গ্রামের মাঠে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ হত্যা মামলায় একই উপজেলার রায়লক্ষ্মীপুর গ্রামের আজিজ ওরফে আজিজুল (৫০) ও একই গ্রামের মিন্টু ওরফে কালুর (৫০) ফাঁসি কার্যকর হয় সোমবার রাতে।

অন্য সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাত ১২টার দিকে দুজনের মরদেহ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে আলাদা আলাদা অ্যাম্বুলেন্সে পুলিশ প্রহরায় দুজনের মরদেহ নিয়ে রওনা দেন স্বজনরা।

রাত আড়াইটার দিকে তারা আলমডাঙ্গার নিজগ্রাম রায়লক্ষ্মীপুর পৌঁছান। আজিজুল ও মিন্টুর দাফনের জন্য গ্রামের মসজিদে নির্ধারিত সময়ের ১০ মিনিটেই আগেই হয়ে যায় ফজরের জামাত।

এর পর মসজিদের সামনের ফাঁকা চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় জানাজা। আজিজ ও মিন্টুর মরদেহ সামনে রেখে একই সঙ্গে জানাজা পড়ানো হয়।

গ্রামবাসী জানান, আজিজুলের মামাতো ভাই ঝিনাইদহের সাধুহাটি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান জানাজায় ইমামতি করেন। সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামের গোরস্তানে পাশাপাশি কবরে তাদের দাফন করা হয়।

স্থানীয় খাসকররা ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান রুন্নু জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে লাশ কবরে নামানোর সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। এ কারণে দাফনকাজে কিছুটা বিলম্ব ও বিঘ্ন ঘটে।

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার তুহিন কান্তি খান বলেন, চুয়াডাঙ্গার আলোচিত ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় দণ্ডপ্রাপ্ত দুজনের ফাঁসি কার্যকরের জন্য কয়েক দিন আগে থেকেই আমরা প্রস্তুতি নিই। শনিবার যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে শেষবারের মতো স্বজনরা তাদের সঙ্গে দেখা করেন। তাদের দুজনের শেষ ইচ্ছা অনুযারী দুই পরিবারের অর্ধশতাধিক মানুষের সঙ্গে দেখা করাই।

এ ছাড়া তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী শনিবার গরুর কলিজা ও ইলিশ মাছ খাওয়ানো হয়। রোববার গ্রিল ও নান রুটি আর সোমবার মুরগির মাংস, দই আর মিষ্টি খাওয়ানো হয়।

এদিকে দুই খুনির ফাঁসি কার্যকর করার জন্য কারাগারের নিরাপত্তায় সন্ধ্যার পর থেকেই গোটা এলাকায় পুলিশ ও র্যাবের নজরদারি বাড়ানো হয়। ১৩ জন অস্ত্রধারী কারারক্ষী কারাগারে দায়িত্বে ছিলেন।

এ ছাড়া পুলিশ ও র্যাবের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন কারাগারের প্রধান ফটকে।

কারাসূত্রে জানা গেছে, দুই খুনির ফাঁসি কার্যকরে রাতে একে একে কারাগারে প্রবেশ করেন যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান, পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়াদ্দার, সিভিল সার্জন দিলীপ শেখ আবু শাহীন ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান। রাতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ওই দুই আসামিকে গোসল করানোর পর তাদের তওবা পড়ান কারা মসজিদের ইমাম। রাতেই স্বজনদের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের পর তাদের খাবার খাওয়ানো হয়।

এর পর তাদের রায় পড়ে শোনানো হয়। নিম্ন আদালতের রায়, আপিল এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমার আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার বিষয়টি তাদের জানানো হয়। পরে তাদের জমটুপি পরিয়ে ফাঁসির মঞ্চে নেওয়া হয়। সোমবার রাত পৌনে ১১টায় প্রথমে মিন্টু ওরফে কালু এবং এর পাঁচ মিনিট পর একই গ্রামের আজিজ ওরফে আজিজুলের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

ফাঁসি কার্যকরে জল্লাদ কেতু কামার, মশিয়ার রহমান, লিটু হোসেন, আজিজুর রহমান ও কাদের অংশ নেন। ফাঁসি কার্যকরের পর সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে চিকিৎসক টিম তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে। এর পর ফরেনসিক টিম ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করার পর মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর আগে সন্ধ্যায় আলমডাঙ্গার খাসকররা ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান রুন্নুর নেতৃত্বে মিন্টু ও আজিজুলের পরিবারের সাতজন সদস্য তাদের মরদেহ নিতে কারাগারে আসেন।

এ সময় তাদের দুজনের জন্য পৃথক দুটি অ্যাম্বুলেন্স সঙ্গে ছিল। ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পরিবারের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের সময় কালু ও আজিজ সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে কাঁদতে থাকেন। লাশ রাতেই বাড়িতে পৌঁছানোর সময় স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে এলাকার বাতাস। পরে সকাল ৬টায় দাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।

প্রসঙ্গত ২০০৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আলমডাঙ্গা উপজেলার জোড়গাছা গ্রামের কমেলা খাতুন ও তার বান্ধবী ফিঙ্গে বেগমকে রায়লক্ষ্মীপুর গ্রামের মাঠে হত্যা করা হয়। তারা দুজন বান্ধবী ছিলেন। হত্যার আগে তাদের দুজনকে ধর্ষণ করা হয় বলে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধের পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে ওই দুই নারীর গলা কাটা হয়। এ ঘটনায় নিহত এক নারীর মেয়ে বাদী হয়ে পর দিন আলমডাঙ্গা থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত ওই দুজনসহ চারজনকে আসামি করা হয়। অপর দুজন হলেন— একই গ্রামের সুজন ও মহি। মামলা বিচারাধীন আসামি মহি মারা যান।

২০০৭ সালের ২৬ জুলাই এই মামলায় চুয়াডাঙ্গার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল সুজন, আজিজ ও কালুকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এর পর আসামিপক্ষের লোকজন হাইকোর্টে আপিল করেন।

২০১২ সালে ১১ নভেম্বর নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখার আদেশ দেন হাইকোর্ট। চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ দুই আসামির রায় বহাল রাখেন এবং অপর আসামি সুজনকে বেকসুর খালাস দেন।

২০ জুলাই যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান খালাসপ্রাপ্ত সুজন। পরে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আজিজ ও কালু রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চান, কিন্তু তা নামঞ্জুর হয়।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ

© All rights reserved © 2016 Paprhi it & Media Corporation
Developed By Paprhihost.com
ThemesBazar-Jowfhowo