১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ সকাল ৮:১৮

মালদ্বীপের ক্লাবগুলোর ঘরবাড়িই নেই

সোনার সিলেট ডেস্ক
  • আপডেট রবিবার, অক্টোবর ১০, ২০২১,

মালদ্বীপের ফুটবলের গুণগত মান এখনকার বাংলাদেশের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও এ দেশে শীর্ষ ক্লাবগুলোর অবকাঠামো নেই বললেই চলে। নিজস্ব একটি জিম দূরে থাক, নিজস্ব ক্লাব ভবনই নেই কোনো ক্লাবের। ঘরোয়া লিগ বা টুর্নামেন্ট চলাকালীন খেলোয়াড়েরা নিজ নিজ বাসায় থাকেন। অনুশীলন মাঠে দেখা হয় সবার।

ম্যাচের দিন দুপুরে খেলোয়াড়েরা এক জায়গায় জড়ো হয়ে মাঠে আসেন। কোথাও হয়তো মধ্যাহ্নভোজ সেরে দল নিয়ে স্টেডিয়ামে যান কোচ। ম্যাচ শেষে খেলোয়াড়েরা যে যাঁর ঠিকানায় ফেরেন। মালদ্বীপের ক্লাব ফুটবল এভাবেই চলছে বছরের পর বছর।

ছোট্ট শহর মালেতে জায়গার অভাব। ক্লাব চাইলেও নিজস্ব ভবন করতে পারছে না। স্থানীয় প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন মাজিয়া স্পোর্টস অ্যান্ড রিক্রিয়েশন ক্লাবের চেয়ারম্যান আহমেদ সাজিদ এ নিয়ে হতাশ। মালে শহরে নিজস্ব রেস্তোরাঁয় বসে কাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের কাছে আমরা অনেকবার জমি চেয়েছি ক্লাব ভবন তৈরি করতে। কিন্তু জমি পাচ্ছি না। ফলে ক্লাব ভবনও হচ্ছে না।’

স্থানীয় ক্রীড়া সাংবাদিক আহমেদ হাবিব জানান, মালে জাতীয় স্টেডিয়ামে মালদ্বীপ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের একটি ছোটখাটো হোস্টেল আছে। প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর জন্য সেখানে সাত-আটটি করে আসন বরাদ্দ। ক্লাব চাইলে সেখানে নিজেদের খেলোয়াড়দের রাখতে পারে। তবে ক্লাবগুলো বিচ্ছিন্নভাবে সাত-আটজনকে রাখে না। খেলোয়াড়েরা মূলত বিভিন্ন দ্বীপ থেকে আসা। মালেতে তাঁরা পরিবার নিয়ে থাকেন বা ভাড়া ফ্ল্যাটে কয়েকজন মিলে ওঠেন। বিদেশিদের রাখা হয় ফ্ল্যাটে।

এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের নিয়ম অনুযায়ী ক্লাব ভবন না থাকলেও দাপ্তরিক কাজের স্থান থাকা আবশ্যক। সেই অনুযায়ী দাপ্তরিক কাজের জন্য ক্লাবগুলো শহরের এখানে-সেখানে কক্ষ ভাড়া নিয়ে কাজ চালাচ্ছে। ক্লাবগুলো নিজস্ব মাঠও নেই। মালে শহরে অনুশীলনের জন্য দুটি টার্ফ ও একটি ঘাসের মাঠ। প্রিমিয়ার লিগের আট দলকে ভাগাভাগি করে টার্ফে সময় বরাদ্দ করে দেয় মালদ্বীপ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। তবে ক্লাবগুলো পুরো টার্ফও বরাদ্দ পায় না। টার্ফের অর্ধেকে অনুশীলন করতে হয়। দুই দল একই সঙ্গে টার্ফে অনুশীলন করে সাধারণত।

মালদ্বীপের তুলনায় বাংলাদেশের ক্লাবগুলোর সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় প্রায় সব ক্লাবেরই নিজস্ব ভবন আছে। ভবন না থাকলে ভাড়া বাসায় ফুটবলারদের রাখে ক্লাবগুলো। অথচ মালদ্বীপ জাতীয় দলের মাঠে নৈপুণ্য দেখে কেউ বিশ্বাসই করবেন না দেশটির ক্লাবগুলোর ফুটবলীয় কাঠামো এত নড়বড়ে।

তারপরও দেশটির কিছু ক্লাব ও জাতীয় দল কীভাবে এত ভালো করছে? কারণ, তারা অল্প বয়সীদের নিয়েই খেলোয়াড় তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করে। সেই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়ার ফলে দক্ষতা ও সামর্থ্যে এগিয়ে যায় অনেকেই। ক্লাবগুলোর নিজস্ব কাঠামো না থাকলেও সবার যুব দল আছে। মাজিয়ার মিডিয়া ম্যানেজার ইরফান হাসান যেমন জানালেন, ক্লাবটির যুব একাডেমির অধীনে ৪০০ কিশোর আছে। ১০-১২টি দ্বীপে তারা কিশোরদের নিয়ে কাজ করছেন। ছেলেরা সব বাড়ি থেকেই এসে অনুশীলন করে। থাকার ব্যবস্থা নেই। কিন্তু এই বাস্তবতা মেনে নিয়েই কিশোরেরা নিয়মিত অনুশীলন করে, নিজেদের আগামী দিনের জন্য তৈরি করে।

বাংলাদেশে অনেক ক্লাব কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দিয়ে খেলোয়াড় কিনছে। দেশের একজন শীর্ষ ফুটবলার বছরে ৬০ লাখ টাকার বেশি পাচ্ছেন ক্লাব থেকে। অঙ্কটা এবার নাকি ৯০ লাখে পৌঁছাচ্ছে। অথচ মালদ্বীপের ফুটবলারদের পারিশ্রমিকেও বাংলাদেশিদের চেয়ে অনেক অনেক পেছনে। চ্যাম্পিয়ন মাজিয়াই সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক দিচ্ছে এখন ফুটবলারদের। এই ক্লাবের সহকারী কোচ আহমেদ সুজায়ের বলেন, ‘মাজিয়ার শীর্ষ ফুটবলাররা মাসে দু-তিন হাজার ডলার বেতন পাচ্ছেন। আমরা বিদেশি নিচ্ছি প্রতি মাসে সর্বোচ্চ পাঁচ-ছয় হাজার ডলারে।’

মাজিয়ার সেরা ফুটবলারদের বছরে আয় সর্বোচ্চ ২৫-৩০ লাখ টাকা। বাংলাদেশের ফুটবলারদের প্রাপ্তি সে তুলনায় অনেক বেশি। বাংলাদেশে প্রায় ৭০-৮০ ভাগ টাকা আগেই নিয়ে নেন ফুটবলাররা। তাই অনেকে কোনোমতে পার করেন মৌসুম। কাঙ্ক্ষিত ফলও পায় না বাংলাদেশের ফুটবল।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2016 Paprhi it & Media Corporation
Developed By Paprhihost.com
ThemesBazar-Jowfhowo