সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচনকে পক্ষপাতদুষ্ট অভিহিত করে ইলেকশন কমিশনের ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন । তারা এই নির্বাচন নিয়ে আইনী লড়াই করারও কথা বলেছেন।
মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে নগরীর জিন্দাবাজারস্থ একটি রেস্টুরেন্টের হলরুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের নেতৃবৃন্দ এমন ইঙ্গিত দেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিলেট সম্মিলিত পরিষদ থেকে নির্বাচিত পরিচালক আব্দুর রহমান জামিল বলেন, চেম্বারের যে প্রেসিডিয়াম গঠন করা হয়েছে, এর বিরুদ্ধে আজ বিকালে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের কাছে আপিল করা হবে। আপিলে বিষয়টির সুরাহা না হলে তারা আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে চেম্বারের নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার জলিলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরে জামিল বলেন,‘সিলেট চেম্বারের নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড শুরু থেকেই ষড়যন্ত্র করে আসছিল’।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রেসিডিয়াম নির্বাচন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন গ্রুপের প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে প্রসিডিয়াম গঠন হল কিনা তা কারো পক্ষে বুঝার কোন সুযোগ নেই। এমতাবস্থায় নির্বাচনী বোর্ড কিসের ভিত্তিতে ২ টি মনোনয়ন বাতিল করলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়।
নির্বাচনী বোর্ডের এসব অযৌক্তিক, অন্যায়ভাবে এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ প্রদান না করে একতরফা ভাবে মনোনয়ন বাতিলের সিদ্ধান্তে সিলেটের সাধারণ ব্যবসায়ী মহল মর্মাহত হয়েছেন।
তারা এমন এক তরফা প্রেসিডিয়াম নির্বাচন মানেন না। অবিলম্বে নতুন করে প্রেসিডিয়াম নির্বাচন করার জোন দাবি জানান ব্যবসায়ী পরিষদ নেতৃবৃন্দ।
সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আজ সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয় সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ। পরিষদের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে আব্দুর রহমান জামিল বলেন, ‘প্রেসিডিয়াম নির্বাচনে নির্বাচিত পরিচালকদের মধ্যে যে কেউ প্রেসিডিয়ামের যে কোন পদে পৃথক পৃথকভাবে প্রার্থী হতে পারেন।
এই প্রক্রিয়ায় উক্ত নির্বাচনে বিভিন্ন গ্রুপ থেকে সভাপতি পদে ২ জন, সিনিয়র সহসভাপতি পদে ২ জন ও সহসভাপতি পদে ২ জন করে মোট ৬ জন সদস্য পৃথকভাবে মনোয়নপত্র ক্রয় করে দাখিল করেন।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী পরিচালনা বোর্ড প্রেসিডিয়াম গঠনের লক্ষে গত সোমবার ৩টায় সভা আহ্বান করেন। উক্ত সভাতে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার জলিল জানান যে, সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি এবং সহসভাপতি পদে উপরে বর্ণিত ৬ জন ব্যতীত আরো অনেক প্রার্থী মনোয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তবে পরবর্তীতে তারা প্রত্যাহার করে নেন।
নবনির্বাচিত পরিচালক ও প্রেসিডিয়ামের সিনিয়র সহসভাপতি পদপ্রার্থী জিয়াউল হক নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চান, কে কে মনোয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন এবং এই পর্যায়ে মনোয়নপত্র প্রত্যাহরের কোন সুযোগ আছে কিনা? তখন নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যান এর কোন উত্তর প্রদান করতে পারেননি।’
আব্দুর রহমান জামিল আরও বলেন, ‘অতপর নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যান সভাপতি পদে তাহমিন আহমদ ও আব্দুর রহমান জামিল, সিনিয়র সহসভাপতি পদে জিয়াউল হক ও ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ এবং সহসভাপতি পদে হুমায়ূন আহমদ ও মো. আতিক হোসেনের নাম প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করেন।
উপস্থিত পরিচালকগণ গোপন ব্যালট বা সরাসরি মতামতের ভিত্তিতে প্রেসিডিয়াম গঠনের কথা ব্যক্ত করেন। নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড কিছু সময় প্রদান করে বলেন যে, আপনারা আলাপ-আলোচনা করে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডকে জানান যে, গোপন ব্যালটের মাধ্যমে বা উপস্থিত সকল পরিচালকের মতামতের ভিত্তিতে নাকি হাত উত্তোলনের মাধ্যমে প্রেসিডিয়াম নির্বাচন করবেন।
তিনি (জলিল) আরো জানান যে, ইতিমধ্যে তাহমিন আহমদ একটি লিখিত আপত্তি নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড বরাবরে প্রদান করেছেন। উক্ত আপত্তির বিষয়বস্তু সম্পর্কে কোন ধরনের ব্যাখ্যা প্রদান করেননি।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান সন্ধ্যা ৭টায় হঠাৎ করে রাত ৯টা পর্যন্ত নির্বাচনী প্রক্রিয়া মুলতবি ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে মুলতবি সভা শুরু করা মাত্রই প্রেসিডিয়াম নির্বাচনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অগ্রসর না হয়েই বিভিন্ন অজুহাতে সময় ক্ষেপণ করে আনুমানিক রাত ১০টায় সংঘবিধির অজুহাতে সভাপতি পদে আব্দুর রহমান জামিল ও সহসভাপতি পদে হুমায়ূন আহমদের প্রার্থীতা বাতিল করে পূর্বেই লিখে রাখা রায় প্রদান করেন। যা সম্পূর্ণ অন্যায় ও ন্যায় বিচারের পরিপন্থি।’
আব্দুর রহমান জামিল বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি, প্রেসিডিয়াম নির্বাচন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন গ্রুপের প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে প্রেসিডিয়াম গঠন হল কিনা তা কারো পক্ষে বুঝার কোন সুযোগ নেই।
এমতাবস্থায় নির্বাচনী বোর্ড কিসের ভিত্তিতে ২টি মনোনয়ন বাতিল করলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। নির্বাচনী বোর্ডের এহেন অযৌক্তিক, অন্যায়ভাবে এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ প্রদান না করে একতরফাভাবে মননোয়ন বাতিলের সিদ্ধান্তে সিলেটের সাধারণ ব্যবসায়ী সমাজ মর্মাহত হয়েছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের নির্বাচিত পরিচালক হুমায়ূন আহমদ, জহিরুল কবির চৌধুরী, দেবাংশু দাস মিঠু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত শনিবার সিলেট চেম্বারের নির্বাচন সম্পন্ন হয়। নির্বাচনে সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ ও সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ থেকে সমান ১১ জন করে পরিচালক নির্বাচিত হন। কোনো প্যানেলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় প্রেসিডিয়াম গঠন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। গতকাল সোমবার বিকাল ৩টায় প্রেসিডিয়াম গঠনের জন্য সময় নির্ধারিত ছিল।