২১শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ বিকাল ৩:৫৯

ইসলামের দৃষ্টিতে হিজড়া সম্প্রদায় ।। হোসাইন আহমদ

হোসাইন আহমদ
  • আপডেট শনিবার, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২২,

হিজড়াদের প্রতি ইসলামের দৃষ্টিকোণ

ইসলামের দৃষ্টিতে হিজড়ারা মানব সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত এবং মানুষ হিসেবে যথাযথ সম্মান ও অধিকার তাদের প্রাপ্য। বরং ত্রুটিপূর্ণ দৈহিক গঠনের জন্য অন্যান্য ত্রুটিপূর্ণ মানুষের মতো তারাও মানুষের সহানুভূতির দাবিদার। ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস অনুযায়ী মানুষের জন্ম ও দৈহিক অবয়ব সম্পূর্ণ আল্লাহর দান। আল্লাহ যাকে যেভাবে খুশি সৃষ্টি করেন। দৈহিক পূর্ণতা ও অপূর্ণতা তাঁর ইচ্ছাধীন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি (আল্লাহ) মাতৃগর্ভে তোমাদের যেমন ইচ্ছা তেমন রূপ দেন। …’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৬)

সুতরাং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের ঘৃণা পোষণ এক প্রকার আল্লাহর প্রতি অনাস্থা প্রকাশ এবং তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রশ্ন উত্থাপন। তবে যেহেতু এটি এক প্রকার ত্রুটি, তাই মানুষ সুস্থতার জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা আদায় করবে এবং আল্লাহর সৃষ্টি হিসেবে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের প্রতি সম্মান ও সহানুভূতি প্রকাশ করবে। মানুষ হিসেবে তাদের মূল্যায়ন করবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তোমাদের চেহারা ও সম্পদ দেখেন না; বরং তিনি তোমাদের হৃদয় এবং আমলসমূহ দেখেন। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৭০৮)

হিজড়াদের শ্রেণিবিন্যাস ও ইসলামী শরিয়তের বিধান

বাংলা একাডেমির সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান বলছে, ‘হিজড়া’ শব্দটি হিন্দি ভাষা থেকে এসেছে। আবার কেউ বলেছেন, হিজড়া শব্দটি এসেছে ফারসি থেকে। যার অর্থ ‘সম্মানিত ব্যক্তি’। পরিভাষায় ত্রুটিপূর্ণ যৌনাঙ্গ বা মিশ্র যৌন বৈশিষ্ট্যের অধিকারী মানুষকে হিজড়া বলা হয়। যৌন বৈচিত্র্যের ভিত্তিতে মোট চার ধরনের হিজড়ার অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

ক. পুরুষ, তবে তারা নারীর বেশে চলে। তাদের আকুয়া বলে। ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে তারা পুরুষ এবং তাদের জন্য মেয়েদের বিয়ে করার অনুমতি রয়েছে।

খ. নারী, তবে দৈহিক গঠনে পুরুষের ছাপ আছে। যেমন—দাড়ি ও মোচ থাকা। এই শ্রেণিকে জেনানা বলা হয়। ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে তারা নারী। তাদের জন্য পুরুষের সঙ্গে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার অনুমতি আছে।

গ. লিঙ্গহীন, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারা নারীর বেশে চলে। তাদের খুনসায়ে মুশকিলা বলে। এরাই প্রকৃতপক্ষে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হিসেবে বিবেচিত। বিজ্ঞ চিকিৎসকরা তাদের আচার-আচরণ ও দৈহিক বৈশিষ্ট্যের বিচারে তাদের নারী বা পুরুষের কাতারভুক্ত করবেন। যৌন জীবনে অক্ষম হওয়ায় এদের জন্য বিয়ে বৈধ নয়। তবে অন্যান্য সামাজিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে।

ঘ. কৃত্রিমভাবে যৌনক্ষমতা নষ্ট করে হিজড়াদের শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। যাদের খোজা বলা হয়। যৌন অক্ষমতার দরুন তাদেরও বিয়ের অনুমতি নেই।

হিজড়াদের ওপরও নামাজ-রোজা ফরজ

ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরাও মুকাল্লাফ বা আল্লাহর বিধান পরিপালনে আদিষ্ট। সাধারণ মানুষের মতো তাদেরও নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত আদায় করতে হবে। এ জন্য পরকালে তাদের জবাবদিহি করতে হবে। যার ভেতর নারীর স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য প্রবল সে নারী হিসেবে এবং যার ভেতর পুরুষের স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য প্রবল, সে পুরুষ হিসেবে ইসলামের বিধান মান্য করবে। আর যার মধ্যে কোনো বৈশিষ্ট্যই প্রবল নয়, সে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নারী বা পুরুষ হিসেবে ইসলামের বিধান মান্য করবে। (বিস্তারিত দেখুন : ইসলামকিউএডটইনফো, ফাতাওয়া : ২২১৯১৯ ও ২১৮১০৮)

দুঃখজনক ব্যাপার হলো, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের ভেতর যেমন ধর্মীয় চেতনা ও মূল্যবোধের অভাব রয়েছে, তেমনি তাদের জন্য ধর্মীয় শিক্ষার বিশেষ কোনো উদ্যোগ সমাজে চোখে পড়ে না। অথচ প্রয়োজনীয় ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা তাদের ওপরও ফরজ এবং তাদের এই ফরজ জ্ঞানার্জনের সুযোগ করে দেওয়া সমাজের অন্যান্য শ্রেণির মানুষের দায়িত্ব। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারকদের উচিত এ বিষয়ে মনোযোগী হওয়া।

উত্তরাধিকার সম্পদে রয়েছে হিজড়ার অধিকার

ইসলাম হিজড়াদের স্বাভাবিক জীবনযাপন নিশ্চিত করতে তাদের উত্তরাধিকার সম্পদ বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী তারা মা-বাবার সম্পত্তির ভাগ পাবে। যে হিজড়ার মধ্যে নারী বা পুরুষ কোনো একটি প্রকৃতি প্রবল, সে নারী বা পুরুষের হিসেবে উত্তরাধিকার সম্পদ পাবে। আর যার প্রকৃতি সহজে নির্ধারণ করা যায় না তার ব্যাপারে চিকিৎসকদের মতামত নেওয়া হবে। (সূত্র : সুনানে বায়হাকি, হাদিস : ১২৯৪)

 

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2016 Paprhi it & Media Corporation
Developed By Paprhihost.com
ThemesBazar-Jowfhowo