ধীরে ধীরে জমতে শুরু করেছে নগরীর ঈদ বাজার। তবে এবারের ঈদের বাজারে ছেলেদের মধ্যে পাঞ্জাবি এবং নারীদের তাঁতের শাড়ির চাহিদা বেশি বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। আর শিশুদের সব ধরনের পোশাক ছাড়াও উচ্চবিত্তরা স্বর্ণের দোকানেও ভিড় করছেন। তবে ক্রেতারা বলছেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার সব কাপড়ের দাম একটু বেশি।
বুধবার রাত সাড়ে ১১টা। সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার এলাকার চৌরাস্তার মোড়। আশপাশের আধা কিলোমিটারজুড়ে তীব্র যানজট। সেই সঙ্গে হাজারো মানুষ গিজগিজ করছে। পাশের বিপণিবিতানগুলোতেও ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। ঈদের কেনাকাটাকে কেন্দ্র করে এই অবস্থা চলছে গত এক সপ্তাহ ধরে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিপণিবিতানগুলোতে ঈদের বিকিকিনি জমজমাট। ভিড় বাড়ে দুপুর থেকে। তবে তারাবির নামাজের পরপরই মূলত ক্রেতাদের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি হয়। গভীর রাত পর্যন্ত চলে কেনাকাটা। কোনো কোনো বিপণিবিতানে আবার সাহরির আগ পর্যন্ত নারী, পুরুষ, শিশু, বয়স্ক থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণীদের ভিড়ও চোখে পড়েছে। বিপণিবিতানের পাশাপাশি ফুটপাতেও ছিল প্রায় একই অবস্থা।
বিক্রেতারা বলেন, মূলত নগরের জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, লামাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, বারুতখানা, নয়াসড়ক, কুমারপাড়া এলাকায় ক্রেতাদের ভিড় বেশি ছিল। নগরের লামাবাজার এলাকার ষড়ঋতু নামের দেশীয় পোশাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা হুমায়ূন কবীর বলেন, কয়েক বছর ধরে সিলেটে দেশীয় ব্র্যান্ডের পোশাকের বেচাকেনা বেড়েছে।
গতকাল নগরীর নয়াসড়কস্থ বিভিন্ন কাপড়ের দোকানে দেখা যায়, কিছু দোকানে ক্রেতা ভিড় থাকলেও কিছু দোকান ছিল ফাঁকা। তবে এর মধ্যে থান কাপড় ও শাড়ির দোকানেই ভিড় ছিল বেশি। একাধিক বিক্রেতা জানান, দোকানে অনেক ধরনের শাড়ি থাকলেও নারী ক্রেতাদের মধ্যে তাঁতের শাড়ি চাহিদার শীর্ষে। এর মধ্যে রয়েছে জামদানি, কাতান, টাঙ্গাইলের সিল্ক। শাড়ির পরই থ্রি-পিস, ওড়না ও জুতার চাহিদা রয়েছে।
দেশীয় কাপড়ের অভিজাত বিপণি আড়ং। গতকাল আড়ংয়ে গিয়ে দেখা যায় ক্রেতাদের ভিড়। তবে এর মধ্যে নারীদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। আড়ংয়ের এক বিক্রয়কর্মী জানান, রমজান শুরুর পর থেকেই তাদের আউটলেটে ক্রেতা ভিড় করছেন। প্রতিদিন বিক্রিও হচ্ছে আশানুরূপ। তবে বিক্রীত পণ্যের মধ্যে পাঞ্জাবি এবং তাঁতের শাড়ি বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি। এরপর ক্রেতাদের পছন্দে রয়েছে থ্রি-পিস, গয়না, জুতা। তবে শিশুদের কাপড়ের মধ্যে সব ধরনের পোশাকের চাহিদা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
নেহার মার্কেটের স্বর্ণের দোকানে গিয়ে দেখা যায় দু-একটি দোকানে ক্রেতা রয়েছেন। নিজেদের অলঙ্কার পছন্দ করছেন। তবে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা জানান, ব্যবসা তেমন ভালো নয়। তবে গত বছরের চেয়ে এবার ঈদ ঘিরে ক্রেতা বেশি। যেহেতু স্বর্ণ অনেকটা বিলাসি তাই এর ক্রেতাও উচ্চবিত্ত।
এছাড়া নগরীর লামাবাজার, পূর্ব জিন্দাবাজার, বারুতখানায় রয়েছে একাধিক মার্কেট ও ফ্যাশন হাউজ। গতকাল সেগুলো ঘুরে খুব ক্রেতা চোখে না পড়লেও একেবারে মন্দ ছিল না। বেশির ভাগ দোকানে ক্রেতা থাকলেও কিছু দোকান তার উল্টো চিত্র ও ছিলো। তবে ফ্যাশন হাউজগুলোতে ক্রেতা উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
জিন্দাবাজার এলাকায় একটি বুটিক হাউসের স্বত্বাধিকারী উজ্জ্বল চক্রবর্তী বলেন, সিলেটে ছোট-বড় কয়েক শ বুটিক হাউস ও টি-শার্টের দোকান রয়েছে। ঈদ কিংবা কোনো উৎসবকে কেন্দ্র করেই মূলত এসব দোকানে বেচাকেনা বেশি হয়।
মধুবন মার্কেটের ব্যবসায়ী লাকি ফ্যাশনের মালিক আনিসুর রহমান বলেন, ব্যবসা ভালো হচ্ছে। গেল দুই বছরের পর লকডাউন উঠে যাওয়ায় ব্যবসা ভালো হচ্ছে। গেল কয়েক মাসে দোকানে নতুন কিছু কালেকশন আনা হয়েছে। তেমন বিক্রি হয়নি। কয়েকদিন ধরে বিক্রি ভালো হচ্ছে।
সিলেট চেম্বারের সভাপতি তাহমিদ বলেন, ঈদ ঘনিয়ে আসায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেচাবিক্রি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিক্রেতাদের রয়েছে সমান ব্যস্ততা। এবারের বেচাকেনা বেশ ভালোই হবে বলে মনে হচ্ছে।