২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ সকাল ৯:২৫

অতিমাত্রায় মোবাইলে আসক্তির বেড়াজালে নারীসহ শিশুরা

মোঃ ওবায়েদ উল্লাহ, নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট বৃহস্পতিবার, আগস্ট ১৮, ২০২২,

আধুনিক যুগে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে সর্বক্ষেত্রে। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে করেছে অতি সহজলভ্য ও আরামদায়ক। জীবনে এনেছে আমূল পরিবর্তন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অন্যতম উপহার হলো স্মার্ট মোবাইল ফোন। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন আমাদের আধুনিক জীবনের প্রতিটি স্তরকে অতি সহজলভ্য করে তুলেছে। তবে মোবাইল ব্যবহারে সুফল বয়ে আনলেও সম্প্রতি অতিমাত্রায় মোবাইল আসক্তির বেড়াজালে বন্দী হয়ে পড়েছে নারীসহ শিশুরা।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, কোমলমতি শিশুদের এই মোবাইল আসক্তি একদিকে যেমন মেধা ধ্বংস করছে, তেমনি আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে কর্মস্পৃহা। মাত্রাতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের একাধিক সচেতন নাগরিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে একসময় রূপকথার গল্প শুনিয়ে শিশুদের খাওয়ানো বা ঘুমপাড়ানো হত যা আজ বিলুপ্তির পথে। দিন যতই গড়াচ্ছে, ততোই শিশুসহ উঠতি বয়সী তরুনেরা নানা ধরনের গেইম আর কার্টুনের বেড়াজালে পড়ে মোবাইল ও ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসে অতিমাত্রায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। একই সাথে আসক্তি বাড়ছে নারীদেরও। দেড় হতে দুই বছরের শিশুরা প্রাথমিক পর্যায়ে অতি সহজে মোবাইল ফোনের ভেতর ইউটিউবে ঢুকে কার্টুন বা গেইম বের করে অভিভাবকের বাহ্ বাহ্ কুড়াচ্ছে আর পরবর্তীতে এই বাহ্ বাহ্ পরিণত হচ্ছে চরম আসক্তিতে। ক্রমশই ধাপে ধাপে বাড়ছে এই আশক্তির মাত্রা।

চট্টগ্রাম নগরীর অভিভাবক মোহসেনা আক্তার জানান, আমার বাচ্চার সকালটা শুরু হয় মোবাইল দিয়ে। আর এই অভ্যাসটা কোনোভাবেই কন্ট্রোল করতে পারছি না। মোবাইল না দিলে কিছু খেতে চায় না, কান্নাকাটি করে। তখন বাধ্য হয়েই ফোন দিতে হয়, কি করবো? ক্রমশই মোবাইলের প্রতি বাচ্চারদের আশক্তি বাড়ছে। ফোন হাতে দিলে খায় না দিলে ঝামেলা করে। জানি এটা বাচ্চাদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর তবু করার কিছু নেই।

কুমিল্লা জেলা স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র সিয়াম জানায় কোচিং, ব্যাচ আর বাসার টিচারের পড়াশুনার চাপে বন্ধুদের সাথে বিকালে মাঠে গিয়ে খেলার সময় হাতে থাকে না। সকালে স্কুল, স্কুল হতে ফিরতে না ফিরতে বিকেলের কোচিং, সন্ধ্যার পর বাসার টিচার, সময় কোথায়? তাই যখনই একটু সময় পাই মোবাইলে গেম খেলি বা মুভি দেখি। ঢাকার যাত্রাবাড়ি আইডিয়াল স্কুলের সাবেক অধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন জানান, মোবাইল আমাদের জীবনকে অতি আরামদায়ক করে তুলেছে। বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে। তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে এই ক্ষুদ্র যন্ত্রটির ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবে বর্তমান সময়ে শিশুসহ তরুণীরা যেভাবে মোবাইল ডিভাইসে আসক্ত হচ্ছে তা অনেকটাই সামাজিক বন্ধন ছিন্ন করে তুলছে, তরুণদের বিপথে নিয়ে যাচ্ছে। এই আসক্তি হতে বেরিয়ে আসা উচিত বলে আমি মনে করি, নাহলে আগামী প্রজন্ম ধ্বংসের দিকে ধাবিত হবে।

শিশুদের মোবাইল ফোন আসক্তি বিষয়ে নাক কান ও গলা বিশেষজ্ঞ সূত্রে জানা যায় এটি শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। মোবাইল ফোন থেকে নির্গত ক্ষতিকর রশ্মি শিশুদের দৃষ্টিশক্তির ভীষণ ক্ষতি করে। যেসব শিশুরা দৈনিক ৬ ঘন্টা মোবাইল ফোনে ভিডিও গেমস খেলে, খুব অল্প বয়সে তাদের চোখের সমস্যা দেখা দেয়। তাই আসুন, আমরা এখনই মোবাইল ফোনকে বাচ্চাদের নাগালের বাইরে রাখতে চেষ্টা করবো এবং বয়োজ্যেষ্ঠরাও এ বিষয়ে সর্বদা সতর্ক দৃষ্টি রাখবো।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ

© All rights reserved © 2016 Paprhi it & Media Corporation
Developed By Paprhihost.com
ThemesBazar-Jowfhowo