লাখাইছড়া চা-বাগানের অবস্থান শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালীঘাট ইউনিয়নে। এই চা-বাগানের ভেতরে রয়েছে উড়িষ্যাটিলা নামে একটি টিলা। টিলার ওপর-নিচ ঘিরে গড়ে উঠেছে অন্তত ১৫০টি চা শ্রমিক পরিবারের বসতি। টিলার ওপরে ১৭টি পরিবার আর নিচে ১৩৩টি পরিবার বাস করছে। এসব পরিবারের সদস্যসংখ্যা অন্তত ৫০০। প্রচন্ড ঝুঁকি নিয়ে সেখানে তারা বাস করছে।
সেখানে বাস করা শ্রমিকরা বলছে, ২০১২-১৩ সালে পাশের দৈত্যটিলার মাটি ধসে একই পরিবারের পাঁচজন মারা গিয়েছিল। আর গত শুক্রবার (১৯ আগস্ট) উড়িষ্যাটিলার সুড়ঙ্গ থেকে ঘর লেপার মাটি সংগ্রহ করতে গিয়ে টিলাধসে একই পরিবারের দুজনসহ চার নারী চা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় লাখাই চা-বাগান এলাকার শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। টিলাধসের আশঙ্কা নিয়ে দিন পার করছে তারা।
লাখাইছড়া চা-বাগান ফিনলে টি কম্পানির। তারাই সেখানে চা শ্রমিকদের জন্য বসতি গড়ে তুলেছে। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন থেকে প্রচন্ড ঝুঁকি নিয়ে বাস করা ওই পরিবারগুলোকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা মানছে না চা-বাগান কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে লাখাইছড়া চা-বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, উড়িষ্যাটিলার চারপাশে মাটি ধসে পড়ছে। সেখানকার অনেক ঘর মাটির তৈরি। কিছু বাঁশের বেড়া দিয়ে টিনের ছাউনির। টিলার মাটি ধসে পড়ায় সব ঘরই রয়েছে ঝুঁকিতে।
উড়িষ্যাটিলার নিচে একটি ঘরে বাস করেন চা শ্রমিক রুবেল মল্লিক। তিনি বলেন, ‘বাগানের ম্যানেজারকে বারবার আমাদের এই দুর্দশার কথা বলেছি, কিন্তু তিনি শুনছেন না। বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে বড় আতঙ্কে আছি। কখন টিলা ধসে পড়ে, সেই ভয় সারাক্ষণ। একটু বৃষ্টি হলেই টিলার মাটি নরম হয়ে ধসে পড়া শুরু করে। ’
এই টিলার বাসিন্দা শ্রী বাণী তাঁতি, গৌড়ি তাঁতি, সবিতা তাঁতি জানান, স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বার কেউ তাঁদের খোঁজ নেন না। দেখতেও আসেন না কিভাবে তাঁরা বেঁচে আছেন। শুধু ভোটের সময় আসেন। বাগানের ম্যানেজার ঘর একটা দিলে দরজা দেন না। চারজন মানুষ মরে গেল, কত কেউ এলো কিন্তু তাঁদের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে না। রাতে বৃষ্টি নামলে প্রচন্ড আতঙ্কে থাকেন তাঁরা।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন বলেন, ‘টিলাধসে চার নারীর মৃত্যুর ঘটনায় ওই এলাকা পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, সেখানকার পরিবারগুলো ঝুঁকি নিয়ে বাস করছে। চা-বাগান কর্তৃপক্ষকে তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দ্রæত ওই পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে। ’
লাখাইছড়া চা-বাগানের ব্যবস্থাপক সাদিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা খোঁজখবর রাখছি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিবারগুলোকে অন্যত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে। ’
মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তানিয়া সুলতানা বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ বাড়িঘর থেকে চা শ্রমিকদের সরিয়ে নিতে সেখানকার ইউএনওকে নির্দেশ দিয়েছি। স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসে দ্রুত ওই পরিবারগুলোকে সরিয়ে নিতে বলেছি।’