২১শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ বিকাল ৫:০১

গ্রিসে নিখোঁজ হবিগঞ্জের ওয়াহিদ

সোনার সিলেট ডেস্ক
  • আপডেট বৃহস্পতিবার, আগস্ট ২৫, ২০২২,

ইউরোপের দেশ গ্রিসে প্রায় দেড় মাস ধরে নিখোঁজ মো. ওয়াহিদ আলীর (২৭) সন্ধান মেলেনি। তার পরিবার ও দেশটিতে থাকা স্বজনদের অভিযোগ অর্থ আত্মসাতের জন্য তাকে গুম করেছে একটি চক্র। ঘটনার পর থেকে দোকান বন্ধ করে পালিয়েছে অভিযুক্ত তিন সহোদর ও তাদের সহযোগীরা। ওয়াহিদ হবিগঞ্জ জেলার অনন্তপুর গ্রামের সিদ্দিক আলী ও মোছা. জোবেদা খাতুনের ছেলে।

রাজধানী এথেন্স থেকে ৩২০ কিলোমিটার দূরে মিনি বাংলাদেশ নামে পরিচিত মানোলাদার লাপ্পা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিখোঁজের পরিবার স্থানীয় থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও অর্থ উদ্ধারের জন্য এথেন্সে অবিস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন নিখোঁজের মামা রমিজ মিয়া।

জানা গেছে, হবিগঞ্জের ওয়াহিদ আলী কয়েক বছর ধরে গ্রিসের কৃষিকাজের জন্য প্রসিদ্ধ গ্রাম মানোলাদার পাশে লাপ্পা নামক গ্রামে বসবাস করে আসছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে লাপ্পায় ‘লিটন মিনি মার্কেট’ নামের একটি বাংলাদেশি মুদি দোকানে কর্মরত ছিলেন। দোকানটি পরিচালনা করতেন কুমিল্লা নাঙ্গলকোটের ইউনুস মিয়া ওরফে লিটন, মো. ইদ্রিস, কুদ্দুস মিয়া নামের তিন সহোদর ও তাদের বন্ধু সুলতান আহমেদ এবং পলাশ মিয়া।

ওয়াহিদ বাংলাদেশিদের মাঝে সৎব্যক্তি হিসেবে খুব অল্প সময়ে পরিচিতি লাভ করে। তাই বিশ্বাস করে তার মাধ্যমে রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের উপার্জিত অর্থ জমা করতেন এবং বিকাশ-মানিগ্রামের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাতেন বলে জানান প্রবাসীরা।

লাপ্পায় বসবাসরত অধিকাংশ প্রবাসীদের বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ব্যাংক হিসাব খুলতে পারেননি। তাই কৃষিকাজের মতো পরিশ্রমে উপার্জিত অর্থ নিরাপদ মনে করে জমা রাখতেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আর সেই ইউরো ওয়াহিদ তার মালিকের কাছেই রাখতেন, যা মালিকপক্ষ তাদের ব্যবসায় খাটাতেন বলেও জানা গেছে। দীর্ঘ লেনদেনের সূত্রে এক সময় বড় অংকের ইউরো জমা হয়ে যায়।

জানা গেছে, নিরাপদে রাখার জন্য গেলো ঈদুল আজহার আগে ওয়াহিদের কাছে আরও ৬১ জন বাংলাদেশি লক্ষাধিক ইউরো জমা রাখেন, যা বর্তমানে বাংলাদেশের এক কোটি টাকার চেয়েও বেশি। ওয়াহিদ সেই ইউরোগুলোও তার কর্মরত প্রতিষ্ঠানের মালিক লিটন, মো. ইদ্রিস, কুদ্দুস মিয়ার কাছে জমা রাখেন।

এ অবস্থায় গত ৭ জুলাই রাত থেকে ওয়াহিদের মোবাইল ফোন বন্ধ পান স্বজনরা। মোবাইলে যোগাযোগ করতে না পেরে পরের দিন গ্রিসে থাকা ওয়াহিদের স্বজনরা সরেজমিনে ওই দোকানে গেলে মালিকপক্ষ তাদের জানান সে রাতে ঘুমিয়ে ছিল, সকালে তারা দেখতে পান সে ঘরে নেই। এছাড়া আর কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি মালিকপক্ষ। এ খবরে হতাশ হয়ে পড়েন ওয়াহিদের স্বজনরা। এক পর্যায়ে ঘটনার ছয়দিন পর স্থানীয় আখিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দেন নিখোঁজের মামা রমিজ মিয়া।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ওয়াহিদের কাছে জমা করা রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের আমানতের পরিমাণ বেশি হওয়ায় লোভের বশীভূত হয়ে অর্থগুলো হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন লিটন, ইদ্রিস, কুদ্দুস, সুলতান ও পলাশ মিয়াদের চক্রটি। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী ওয়াহিদকে হত্যা করে মরদেহ গুম করার অভিযোগ উঠেছে তিন ভাই ও তাদের দুই বন্ধুর বিরুদ্ধে।

এই খবরটি সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং ওয়াহিদকে খুঁজে বের করার জোর দাবি জানান।

এ ঘটনায় স্থানীয় আখিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনা করে গ্রিক পুলিশ। এরপরই দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যায় অভিযুক্ত সবাই। পরে পুলিশ ওয়াহিদের কর্মস্থল ও বাসস্থান পরিদর্শন করেছেন। এ সময় অভিযুক্ত কাউকে খুঁজে পায়নি পুলিশ। এছাড়া এথেন্সের প্লাথিয়া ভাতিসে অবস্থিত আরেকটি দোকান রয়েছে অভিযুক্ত লিটনের। সেই দোকানটিও বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যায় লিটন।

এ ঘটনার বিষয়ে তাদের বক্তব্য নিতে লাপ্পার ‘লিটন মিনি মার্কেটে’ গেলে দেখা যায় সেটি তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া এথেন্সের প্লাথিয়া ভাতিসে অবস্থিত মিনি মার্কেটে একাধিকবার গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা জানান, ওই ঘটনার পরপরই তালা দিয়ে পালিয়েছে লিটন।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতারা। এ সময় বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, ধারণা করা যাচ্ছে জমা করা টাকার জন্য এমন ঘটনা হতে পারে। তিনি বলেন, ‘তাকে খুঁজে পেতে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ দূতাবাসে আলোচনা করা হয়েছে। স্থানীয় থানায় পুলিশের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাকে খুঁজে পেতে বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের পক্ষ থেকে যা কিছু করা দরকার বা যেখানে যেখানে প্রয়োজন সেখানেই যাবেন বলে আশ্বাস দেন কমিউনিটির সভাপতি।

এ ব্যাপারে এথেন্সে অবস্থিত দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) বিশ্বজিৎ কুমার পাল ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আইনি প্রক্রিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতার কথা জানান।

এ বিষয়ে জানতে লাপ্পার আখিয়া থানায় গেলে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, নিখোঁজ ওয়াহিদকে খুঁজে বের করতে তারা তৎপরতা চালাচ্ছেন। এছাড়া দূতাবাস থেকেও তাদের বেশ কয়েকবার ফোন করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত খুঁজে বের করার অনুরোধ করা হয়েছে বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তারা।

এদিকে সরেজমিনে না পেলেও বিভিন্ন মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর সংগ্রহ করে অভিযুক্ত ইউনুস মিয়া ওরফে লিটনের সঙ্গে মোবাইলফোনে কথা হয় একজন সাংবাদিকের। এ সময় লিটন জানান, তাদের কেউই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। লিটন দাবি করেন, প্রতিপক্ষ ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য তাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। তবে আত্মগোপনে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে লিটন জানান, তারা পুলিশের ভয়ে পালিয়ে গেছেন। তবে এভাবে তাদের আত্মগোপন করা ঠিক হয়নি বলেও স্বীকার করেন।

এমন পরিস্থিতিতে জড়িতদের শনাক্ত করে ওয়াহিদকে উদ্ধার করাসহ অর্থ আত্মসাৎকারীদের কবল থেকে প্রবাসীদের টাকা উদ্ধার করে তা ফিরিয়ে দিতে বাংলাদেশ দূতাবাস ও গ্রিক প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন গ্রিস প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2016 Paprhi it & Media Corporation
Developed By Paprhihost.com
ThemesBazar-Jowfhowo