তিন ম্যাচ বাইরে থাকার পর দিল্লি ক্যাপিটালসের একাদশে জায়গা মিলেছিল মোস্তাফিজুর রহমানের। আজ মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিলেন এই বাঁহাতি পেসার।
মোস্তাফিজের না খেলা প্রথম তিন ম্যাচের একটিতেও জয়ের দেখা পায়নি দিল্লি। এবার তাকে খেলিয়েও জয়ের মুখ দেখা হলো না দলটির। তবে বল হাতে ঠিকই ছাপ ফেলেছেন মোস্তাফিজ।
আইপিএলের ১৬তম ম্যাচে আজ ঘরের মাঠ অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে ৬ উইকেটে হেরেছে দিল্লি । শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ডেভিড ওয়ার্নার ও অক্ষর প্যাটেলের ফিফটিতে সব উইকেট হারিয়ে ১৭২ রানের সংগ্রহ পায় দিল্লি। জবাবে শেষ বলে রোমাঞ্চকর জয় তুলে নেয় মুম্বাই। টানা দুই ম্যাচ হারা মুম্বাই এই ম্যাচ দিয়ে জয়ে ফিরলো। অন্যদিকে দিল্লি রইলো হারের বৃত্তেই।
আগের ম্যাচের একাদশ থেকে দুটি পরিবর্তন আনে দিল্লি। । ইনজুরিতে পড়া খলিল আহমেদের জায়গা ইয়াশ ঢুল এবং রাইলি রুশোর পরিবর্তে সুযোগ পেয়েছেন মোস্তাফিজ। টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে দিল্লি। ব্যাট হাতে এক বল মোকাবিলাও করেন দ্য ফিজ। করেন ১ রান। তবে এর আগে অধিনায়ক ওয়ার্নার ও অক্ষর মিলে দলের সংগ্রহকে লড়াই করার মতো অবস্থায় নিয়ে যান।
ওয়ার্নার ৪৭ বলে করেন ৫১ রান। অর্থাৎ তার স্ট্রাইক রেট নিয়ে যে সমালোচনা হচ্ছে, তা থেকে ফিফটি হাঁকিয়েও মুক্তি মিলছে না এই বাঁহাতি ওপেনারের। ৬ চারে সাজানো ইনিংসটি তিনি খেলেছেন ১০৮.৫১ স্ট্রাইক রেটে। তবে তাকে খুব একটা দায় দেওয়ারও সুযোগ নেই। কারণ অপরপ্রান্তে উইকেট পতনের মিছিলে তাকে ধরে খেলতেই হতো। একসময় ৯৮ রানে ৫ উইকেট হারানো দিল্লিকে ১৬৬ রানে রেখে বিদায় নেন ওয়ার্নার। একই ওভারের দুই বল আগে বিদায় নেওয়া অক্ষর অবশ্য ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং করেছেন। মাত্র ২৫ বলে ৪ চার ও ৫ ছক্কায় তিনি করেছেন ৫৪ রান।
জবাবে দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও ঈশান কিষাণের জুটিতেই দারুণ শুরু পায় মুম্বাই। দুজন মিলে তুলে ফেলেন ৭১ রান। রান আউট হয়ে ফেরার আগে ঈশানের ব্যাট থেকে আসে ২৬ বলে ৩১ রানের ইনিংস। এরপর তিলক ভার্মাকে নিয়ে আরও পঞ্চাশের বেশি রান যোগ করেন রোহিত। রোহিত প্রায় এক বছর পর পান আইপিএলে ফিফটির দেখাও। দিল্লির কোনো বোলারই সেভাবে চাপ বাড়াতে পারছিলেন না। এমনকি শুরুটা ভালো হয়নি মোস্তাফিজেরও। বল হাতে নিজের প্রথম ওভারে তিনি খরচ করেন ১৩ রান।
১৪ ওভারেই ১২১ রান তুলে ফেলা মুম্বাইকে প্রথম চাপে ফেলেন মোস্তাফিজ-ই। ১৫তম ওভারে তার বল থেকে রান বের করতে হিমশিম খেয়েছেন রোহিত ও তিলক। ওই ওভার থেকে আসে মাত্র ২ রান। আর এতে শেষ ৩০ বলে ৫০ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায় মুম্বাইয়ের সামনে। কিন্তু পরের ওভারে মুকেশ কুমার আক্রমণে এসেই প্রথম তিন বলে ১৬ রান খরচ করে বসেন। তবে শেষ দুই বলে তিলক ভার্মাকে বিদায় করে ব্রেক থ্রু এনে দেন। যদিও ব্যাট হাতে আসল কাজটা ঠিকই করে আসেন তিলক। খেলেন মাত্র ২৯ বলে ৪১ রানের ঝড়ো ইনিংস। পরের বলে গোল্ডেন ডাক মেরে ফিরে যান সূর্যকুমার যাদব। সাদা বলের ক্রিকেটে এ নিয়ে টানা ম্যাচে গোল্ডেন ডাক মারলেন সূর্য।
১৭তম ওভারে ফের বল হাতে নেন মোস্তাফিজ। শেষ ১৮ বলে তখন মুম্বাইয়ের দরকার ২৬ রান। এবার ওভারের প্রথম বলে চার হজম করলেও পরের দুই বল ডট দিয়ে চতুর্থ বলে রোহিতের উইকেট তুলে নেন মোস্তাফিজ। ৪৫ বলে ৬৫ রানের ইনিংস খেলা রোহিত বিদায় নেওয়ার পরের বলে বাউন্ডারি হাঁকান ক্রিজে নতুন আসা ক্যামেরন গ্রিন। ওভারে ৮ রান খরচে ১ উইকেট নেন মোস্তাফিজ।
১৮তম ওভারে এনরিখ নরকিয়া মাত্র ৬ রান খরচ করলে খেলা জমে ওঠে। শেষ দুই ওভারে ১৮ রান দরকার মুম্বাইয়ের; এমন হিসাব সামনে রেখে ফের মোস্তাফিজের হাতে বল তুলে দেন দিল্লির অধিনায়ক ওয়ার্নার। কিন্তু এবার আর প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি বাংলাদেশি পেসার। দুই ছক্কাসহ ওই ওভারে ১৫ রান তুলে নেন মুম্বাইয়ের দুই ব্যাটার টিম ডেভিড ও গ্রিন।
শেষ ওভারে নরকিয়া জমিয়ে তুলেছিলেন। ওই ওভারে মুম্বাইয়ের লক্ষ্য ছিল মাত্র ৫ রানের। প্রথম চার বল থেকে আসে মাত্র ২ রান। পঞ্চম বলে অল্পের জন্য রানআউট থেকে বাঁচেন গ্রিন। রানও আসে একটি। ফলে শেষ বলে মুম্বাইর দরকার ছিল ২ রান। মিড অফে বল ঠেলে দিয়ে ঠিক ২ রানই সংগ্রহ করেন ডেভিড। ফলে রোমাঞ্চকর লড়াই শেষে জয় তুলে নেয় মুম্বাই।
ফেরার ম্যাচে মোস্তাফিজ ৪ ওভারে ৩৮ রান খরচে নিয়েছেন ১ উইকেট। আর ২ উইকেট গেছে মুকেশ কুমারের ঝুলিতে।
৩ ম্যাচে ১ জয় পাওয়া মুম্বাই পয়েন্ট তালিকার আটে অবস্থান করছে। অন্যদিকে চার ম্যাচের সবক’টিতেই হারা দিল্লি আছে সবার শেষে।