২রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ রাত ১২:২১

প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছে আমি বিশ্বকাপ খেলি

খেলাধূলা ডেস্ক
  • আপডেট মঙ্গলবার, আগস্ট ২৯, ২০২৩,

বেশি দিনের কথা নয়, ৩ আগস্ট বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সঙ্গে বৈঠক শেষে নাজমুল হাসান পাপনের বাসার গ্যারেজে সংবাদ সম্মেলন করেন তামিম ইকবাল। স্বেচ্ছায় অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেন। তবে বিশ্বকাপ খেলবেন জানালেও এশিয়া কাপে ইনজুরির কারণে তাকে যে পাওয়া যাবে না, তা নিশ্চিত করেন তামিম। এ ঘটনার আগে তার অবসর নেওয়া… এরপর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর আবার ক্রিকেটে ফেরা এবং পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম নটআউট নোমানে খোলাখুলি কথা বলেছেন তামিম ইকবাল। জানিয়েছেন অধিনায়কত্ব ছাড়ার কারণ, ইনজুরি থেকে ফেরার লড়াই এবং অবশ্যই বিশ্বকাপ নিয়ে স্বপ্নের কথা…

ইনজুরির অবস্থা

মাশাআল্লাহ ভালো। খুবই ভালো। যেভাবে প্ল্যান সেট করা হয়েছে, এখন পর্যন্ত ঠিক পথেই আছি। ইনজেকশন নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত ব্যাক পেইনের সমস্যা বোধ করিনি। সামান্য কিছু স্টিপনেস এক-দুদিন থাকে। স্টিল নাউ আই অ্যাম ভেরি হ্যাপি। যারা এই প্রোগ্রামের সঙ্গে আছেন, আপনারা জানেন যে, নতুন রিহ্যাব ম্যানেজার এসেছে। তা ছাড়া বায়েজীদ আছে (জাতীয় দলের ফিজিও বায়েজীদ ইসলাম), যারা প্রক্রিয়ার সঙ্গে আছে সবাই আমার ইনজুরি মুক্তির কার্যক্রম নিয়ে সন্তুষ্ট। আমার মনে হয়, ঠিক পথেই আছি। সবকিছু ঠিকভাবে এগোতে থাকলে যে সিরিজ টার্গেট করা আছে, আশা করি খেলতে পারব।

পুরোপুরি ব্যাটিং কবে থেকে

আশা করি, ৭ তারিখ (সেপ্টেম্বর) থেকে পুরোপরি ব্যাটিং ম্যানুয়ালে নেট সেশন করতে পারব, যেখানে কোনো রেস্ট্রিকশন থাকবে না যে, এটা করা যাবে না… ওটা করা যাবে না। আপনারা দেখেছেন প্রথম দুদিন আমি থ্রো ডাউন করেছি। পরের সেশনে স্টিক ইউজ করতে পারব। মানে স্টিক দিয়ে বল থ্রো করে ব্যাটিং। এরপর স্পিনারদের বিপক্ষে ব্যাটিং করতে পারব। এভাবে ৭ তারিখ থেকে কোনো বিধিনিষেধ ছাড়া ব্যাটিং করতে পারব।

মাঠে ফেরার টার্গেট

যেমনটা আপনাকে বললাম, প্রগ্রেসটা খুব পজিটিভ। খুবই ভালো। আমাদের নতুন যে রিহ্যাব ম্যানেজার এসেছেন, তিনি লম্বা একটা চার্ট দিয়েছেন। সেই চার্ট অনুসারে প্রতিদিন আমরা যে জিনিসের সক্ষমতা অর্জন করছি সেটাই টিক চিহ্ন দিচ্ছি। তালিকার অধিকাংশে যখন টিক চিহ্ন পড়বে, তখন রিহ্যাব ম্যানেজারের কথা অনুযায়ী আমরা খেলার মতো ফিট হয়ে যাব। এখন পর্যন্ত কোনো সেটব্যাক নেই। সবকিছু ঠিক ভাবেই এগোচ্ছে।

১০০ ভাগ ফিট না হয়ে কি খেলবেন

আমার তো মনে হয় না যে, পৃথিবীর কোনো খেলোয়াড় ১০০ ভাগ ফিট হয়ে ক্রিকেট খেলে। কেউ ৯০ পার্সেন্ট থাকে তো কেউ ৯৫ থাকে। কেউ ৮৫ পার্সেন্ট থাকে। কেউ আবার ৯৯ পার্সেন্ট থাকে… তাকেও হানড্রেড পার্সেন্ট ফিট বলা যায় না।

অধিনায়কত্ব ছাড়া নিয়ে

দেখুন আমার অধিনায়কত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে ডেফিনেটলি কিছু কারণ ছিল। আমার মনে হয় অধিনায়কত্ব পাওয়া থেকে ছাড়া পর্যন্ত আমি খুবই ভালো করেছি। আমার আসলে নিজের মুখে বলার কিছু নেই। রেজাল্ট নিজেই এর প্রমাণ। আমার মনে হয়, পুরো পরিস্থিতিতে যেভাবে ব্যাপারটা এখন দাঁড়িয়েছে… যদি আমি বলি সবকিছু পারফেক্টলি ফাইন, তাহলে মিথ্যা বলা হবে। সেটা আমি কখনো বলব না।

ইনজুরি না থাকলেও অধিনায়কত্ব ছাড়তেন

হ্যাঁ। আমি অধিনায়কত্ব ছাড়ার সময় সেদিন সেলফিশ শব্দটা ব্যবহার করেছিলাম। কারণ কেউ যদি আমার প্রতি আপসেট হয়ে থাকে বা আমি কারও প্রতি আপসেট থাকি তাহলে আপনি যখন এত বড় ইভেন্টে (বিশ্বকাপ) যাবেন। আবার যাওয়ার পর যদি কেবল নিজের পজিশনটা ধরে রাখেন। আপনি ভালোভাবে কমিউনিকেট করতে পারছেন না। বা আনইজিনেস রয়ে যাচ্ছে। তাহলে তো টিমে তার একটা প্রভাব পড়বেই। আমি সেরকম সেলফিশ হতে চাইনি। আমার কারণে টিমে ৫ ভাগ প্রভাব পড়ুক এই জিনিস আমি চাইনি। এ কারণে অধিনায়কত্ব ছেড়েছি। আর দ্বিতীয় কারণ অধিনায়কত্ব আমার কাছে না থাকলে আমি যে রাতে ঘুমাতে পারব না এমন নয়।

‘২০২৩ সালে বিশ্বকাপে ক্যাপ্টেন থাকব না’

আই হ্যাড এ ফিলিংস… আই ডোন্ট নো… এরকম নয় যে, কেউ আমাকে এসে বলেছিল যে, ‘বিশ্বকাপ দলে তুমি ক্যাপ্টেন থাকবা না, বোর্ড থেকে কেউ বলেনি।’ আমার বিশ্বাস ছিল যে, ‘আমি চাইলে আমি থাকতে পারব… এবারও বোর্ড প্রেসিডেন্ট বা ক্রিকেট অপারেশন্স, সিলেকটর কেউ বলেনি। কোনো ধারণাও দেয়নি, দেওয়ার অবশ্য কোনো কারণও নেই। আমি ভালো করছিলাম… তবু আমার মনের মাঝে এটি ছিল… যা কি না পরে সত্যই হয়েছে। আমার আসলে এটি নিয়ে বাজি ধরা উচিত ছিল কোথাও…

৩০ মাসের ক্যাপ্টেন্সি প্রসঙ্গে

আই নেভার ওয়ান্টেড টু বি অ্যা ক্যাপ্টেন… নেভার এভার। অনেকের ধারণা, আমি ক্যাপ্টেনসি পছন্দ করি। নেভার… আমার কাছে যখন অফার প্রথম আসে, তখনো না করেছি… হয়তো আমি বোর্ডে মিটিংয়ে গিয়ে বলিনি; কিন্তু যিনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাকে না বলেছি। রাসেল ডোমিঙ্গোও বলেছিল, আমি ওকেও বলেছি। কিন্তু ওর একটা কথা, আমাকে সত্যিকার অর্থে আমার চিন্তাটা বদলে দিয়েছে। সে বলেছিল, আমি জানি তুমি ক্যাপ্টেন হতে চাও না। কিন্তু এমন একদিন আসবে, তোমার মাথায় আসবে, তোমারও জাতীয় দলে ক্যাপ্টেন হওয়ার সুযোগ এসেছিল। তুমি তা নেওনি। তুমি তো জানো না, ক্যাপ্টেন হিসেবে তুমি সেরা হতেও পারো, আবার নাও হতে পারো। কিন্তু তুমি তো ওই জিনিসটা কোনোদিন ট্রাই করোনি। তাই আমি তোমাকে পরামর্শ দেব, তুমি অন্তত একবার চেষ্টা করো… ভালো না লাগলে ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ তো থাকছেই। ওর এই কথাটা আমার সিদ্ধান্ত পাল্টে দিতে সাহায্য করেছে। দেখি না একবার চেষ্টা করে। ছোটবেলা থেকে আমার ওই জিনিসটাই ছিল না… এখনো নেই… কোনো পর্যায়ের ক্রিকেটেই নেই। আমি এতদিন ধরে ঢাকা লিগে প্রাইম ব্যাংকের হয়ে খেলি… সবসময় আগেভাগেই বলে দিই আমি ক্যাপ্টেন হবো না… বিপিএলেও তাই… আমি অনেককেই চিনি… তারা একটা পর্যায়ে পৌঁছে জাতীয় দলের ক্যাপ্টেন হওয়ার স্বপ্ন দেখে… আমি কখনো তেমন স্বপ্ন দেখিনি।

দলে অস্বস্তিকর প্রত্যাবর্তন…

আমার কাছে মনে হয়, সব দায়িত্ব তো আমার একার নয়। এতগুলো প্রফেশনাল ব্যক্তি আছে, এত অর্থ খরচ হচ্ছে, এত বড় ক্রিকেট বোর্ড আমাদের আছে… সব দায়িত্ব তো আমার হতে পারে না। আমার দিক থেকে আমার কাজ হলো ফিট হওয়া, আমি প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টায় যাই… ১০টা পর্যন্ত থাকি মাঠে… ওটাই করে যাচ্ছি।

তাইলে বিশ্বকাপ খেলা নিয়ে কোনো সংশয় নেই

আমার কাছে মনে হয় না। যদি বড় কিছু না ঘটে। যখন হয় তখন দেখা যাবে… তবে এখন পর্যন্ত সবকিছুই ঠিকঠাক এগোচ্ছে।

বিশ্বকাপের আগে পাঁচটি ম্যাচ

আমার জন্য তো গুরুত্বপূর্ণ। তবে ম্যাচ নয় সময়টা আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমি অনেকদিন খেলছি, তাই ম্যাচের সংখ্যাটা আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। স্বাভাবিকভাবে আমি যদি ১০টা পূর্ণ নেট সেশন করতে পারি, তবেই যথেষ্ট। প্রথম ম্যাচের আগেই আমি ফিট হয়ে যাব। তবে এটা খুবই ভালো যে আমরা ৫টি ম্যাচ পাচ্ছি… ৩-৪টি খেললেই যথেষ্ট। ইতিবাচক আমার জন্য।

স্বস্তি কি ফিরেছে

হাসি… উত্তর দেওয়া খুবই কঠিন। (এড়িয়ে গেলেন)

ক্যাপ্টেন্সি ছাড়তে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি

হ্যাঁ। অবশ্যই বলেছি। তার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলেছি। আমি আমার অনুভূতিটা তার সঙ্গে শেয়ার করেছি। ছাড়ার দিনও ফোনে কথা বলেছি। পাপন ভাইয়ের ফোনে কথা বলেছি। আমি তাকে ব্যাখ্যা দিয়ে আমি কী ভাবছি, কেন আমি এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছি… তার কথা একটাই ছিল… তিনি বলেছেন তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমি যেন দলের হয়ে খেলি… বিশ্বকাপে খেলি… বলেছেন, দেখো তামিম আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো তুমি খেলো। ক্যাপ্টেন্সি নিয়ে তুমি তোমার সিদ্ধান্ত নাও। তবে আমি তোমার সঙ্গে আছি। এই মেসেজই আমি তার কাছ থেকে পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী কিছু বললে ওটা না বলা অসম্ভব।

প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ

তাকে কয়েকবারই বোঝানোর চেষ্টা করেছি, পারিনি। তাছাড়া দিনশেষে ওনার যে রিজিওনগুলো ছিল, সেগুলোর কোনোটাকেই না বলতে পারবেন না। ওনার মতো ব্যক্তি যদি কোনো অনুরোধ করেন, তবে আর তো কথাই থাকে না। আমি কেন, বাংলাদেশের কেউ না বলতে পারবেন না।

প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছে

ওই যে আমি বললাম, উনার মূল ইচ্ছা হলো আমি দলের হয়ে খেলি। সেটিই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। হ্যাঁ আমি ক্যাপ্টেন্সি নিয়ে আমার কথা বলেছি, যা কি না আমি মিডিয়ায় কোনো দিনই আমি বলতে পারব না। ঝামেলাগুলো মিটেছে কি না বলতে পারব না, তবে ঝামেলাগুলোর কথা আমি তাকে বলেছি।

ফলোআপ জানতে চাননি তিনি…

ওনার সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে, এতটুকু বলতে পারি।

মজা পেলাম, নতুন ক্যাপ্টেন, পুরোনো কোচ, বোর্ড প্রেসিডেন্ট কারও সঙ্গে যোগাযোগ নেই, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আছে… হাসি

বিশ্বকাপে চাপ

একদম ফ্রি থেকে মাঠে ঢুকব, সেটা বলব না। সম্ভবত কিছু চাপ তো থাকবেই। আবারও বলি, আমাকে চাপমুক্ত করার দায়িত্ব আমার একার নয়… আমার দায়িত্ব আমাকে ফিট হওয়া। সুযোগ পেলে আমার সামর্থ্য প্রমাণ দেওয়াই আমার কাজ। বাকিসব অন্যদের। সবকিছু অ্যাডজাস্ট করার কাজ আমার না, আমাকে করতে হবেও না।

বিশ্বকাপ নিয়ে কতটা আশাবাদী

অনেক আশাবাদী। আমি হয়তো ক্যাপ্টেন থাকব না, কিন্তু স্বপ্নটা ঠিক আগের মতোই থাকবে। আবার স্বপ্নটা আমার একার হলেই হবে না… সবার হতে হবে। আমি বিশ্বাস করি… দলের সবার স্বপ্নটাও আমার মতো… সবার বলতে পুরো ২৫ জনের দলের… যারা এখনো স্কোয়াডে আছে, সবাই তাই।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ

© All rights reserved © 2016 Paprhi it & Media Corporation
Developed By Paprhihost.com
ThemesBazar-Jowfhowo