৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ভোর ৫:৪৩

তোরাব আল হাবীব এর কিশোর কবিতার বই-একটা আকাশ একটা ঘুড়ি

শাহাদত বখত শাহেদ
  • আপডেট সোমবার, আগস্ট ২৪, ২০২০,

বন্ধুবর শিশুসাহিত্যিক সোহেল মল্লিক ছড়াকার তোরাব আল হাবীব নিয়ে যথার্থ বলেছেন, তিনি বলেন-“আমার বিশ্বাস কবি তোরাব আল হাবীব তার কিশোর কবিতায় একটি নিজস্ব ঘরানা তৈরি করেছেন এবং এটি ক্রমশঃ বাংলা কিশোর কবিতার রূপকেন্দ্রে তোরাবীয়বাহিত হয়ে ধরা দিতে পারে”।

তার এই বক্তব্যের সাথে আমি একমত হলেও তার সাথে আমি কিছু সংযোজন করতে চাই। কিশোর কবিতার এই মহাসাগরে গতানুগতিক বিষয়ের পাশাপাশি বর্তমান সময়ের উপজীব্য বিষয়ের সমন্বয় সৃষ্টি করে নতুন উপকূল সৃষ্টি করতে হবে। যেখানে শুধু তোরাব আল হাবিবের জাহাজ নঙ্গর করতে পারে। এটা তার পক্ষে খুব একটা কঠিন হবে বলে আমার মনে হয় না।

তোরাব আল হাবীবের বেড়ে ওঠা আবহমান বাংলার গ্রাম্য মেঠো পথে ছুঁয়ে ছুঁয়ে গেছে। । যার জন্য প্রকৃতির কাছাকাছি গিয়েও তিনি লিখেছেন কবিতা। তার বিশাল শব্দ ভান্ডার রয়েছে যেগুলো কবিতাকে করে তুলেছে নান্দনিক ।ছন্দ ও অন্ত্যমিলের যাদুতে কবিতা পড়ার আগ্রহ জাগিয়ে দিয়েছে বারংবার।

তোরাব কিশোর বেলার স্মৃতি গুলোকে কাজে লাগিয়েছেন ছন্দের যাদুতে ।
এই বইয়ের কবিতা পাঠে অনেককে কিশোর বেলায় নিয়ে যাবে দ্রতলয়ে। তিনি
বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠা জুড়ে লিখেছেন দীর্ঘ কবিতা। কবিতা গুলো এক শ্বাসে কম সময়ে পঠন করার মত । কবিতাকে আরো প্রাণবন্ত করে তুলেছে বইয়ের প্রচ্ছদ ও কবিতার সাথে চার কালারের জকমক ছবি। যার ফলে শিশু কিশোর এমনকি বড়োদেরও আকর্ষণ করবে কিশোর কবিতার বইটি।

তোরাব কিশোর মনের ইচ্ছে আকাঙ্খা, প্রকৃতি শোভা ফুল পাখি নদী খাল বিল ষড়ঋতুর চিত্র ও শাশ্বত বাংলার রুপ তোলে এনেছেন মায়াবি ছন্দ ও বর্ননায়।
তোরাবের প্রতিটি কবিতার প্রতিটি লাইন পাঠকদের আকৃষ্ট করবে বলে আমার
বিশ্বাস।

এবার তোরাবের কবিতায় আসা যাক। প্রথম কবিতা “জোছনা ও কবি” তে লিখেছেন :
কবির জাগে জোছনা দেখার সাধ /যখন ওঠে গভীর রাতে একটা আলোর চাঁদ। জোছনা প্রেমিক কবি নিতান্তই /ব্যাগের মাঝে একে একে রাখেন কলম-বই।

অন্য পঙক্তি : ঝিঁঝির ডাকে যেই না কাঁপে রাত/দূরের ঝোপে হুক্কাহুয়া ডাকে অকস্মাৎ। সেই সময়ে খোঁজেন কবি ফুল /মনের ভেতর প্রকৃতি প্রেম বাধায়
হুলুস্থুল।

এই কবিতায় কবি মনের আবেগ প্রষ্ফুটিত হয়েছে দারুন ভাবে।

আমরা বই পড়া থেকে দূরে সরে গেলেও তোরাব বই পড়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি করেছেন এই “বই” কবিতার মাধ্যমে : কাজ হাতে নেই / অলস সময় একলা যখন হই / তখন আমার সঙ্গী যে হয় বই / সকাল – দুপুর বইয়ের মাঝে চোখ ডুবিয়ে রই। আমার কেবল লক্ষ্য থাকে করতে বইয়ের খোঁজ /তাই ছুটে যাই বইয়ের ঘরে রোজ/বই-ই আমার আহার -পানি নিত্য ভুরিভোজ।

তোরাব মাতৃভাষা প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন তার “অমলিন ভাষা”
কবিতায় : ভাষার মাসে কৃষ্ণচূড়া, পলাশ-শিমুল ফোটে/বর্ণমালার গানটা শুনি পাখপাখালির ঠোঁটে /কৃষ্ণচূড়া, পলাশ-শিমুল লাল/শ্লেোগান ছিল তীব্রতর ঝাল/জিন্না’টাকে ঘিন্না করে বাংলা চিরকাল।

শিশু বিষয়ক চিন্তাধারাকে কাজে লাগিয়েছেন তার “আজকের শিশু” কবিতায়:
আজকের শিশু হবে আগামীর ফুল/ নাম হবে জু্ঁই-জবা,চামেলী-বকুল/সৌরভে ছুঁয়ে যাবে ঘরদোর ঠিক/অাজকের শিশু হবে কাল সৈনিক।
আজকের শিশু হবে আগামীর চাঁদ /অাঁধারের রাতে হবে আলো আহ্লাদ/
সূর্যের শিখা হয়ে তাড়াবে সে মেঘ/রকেটের বেশি তার হবে গতিবেগ।

পরিবারে মা ও বাবা পরিবারের মূল। সেই বাবাকে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন “বেঁচে থাকার তট ” কবিতায় : বাবা হলেন একটি গাছের কাণ্ড-পাতা/অাকাশছোঁয়া শীর্ষ আগা/ কিংবা গাছের মূল / বিপদ এলে বাবার বাড়ে শঙ্কা -হুলুস্থুল /বাবা হলেন চোখজুড়ানো ফুল।

বর্তমানে নগরায়নের কারনে গ্রাম হয়ে গেছে একদম বিরানভূমি। গ্রামের সেই মনোলোভা প্রকৃতি নেই। তার “ছোট্টবেলা হাতরে খুজি” কবিতায় তা ছন্দের গাঁথুনিতে উঠে এসেছে এই ভাবে : খাল-পুকুরে কলাগাছের ভেলা ছিল –
রাস্তা ছিল কাদা-জলে ভরা /কী মনোহর লাগতো বসুন্ধরা /সবুজ সবুজ গ্রামটা যেন আজকে বিরানভূমি /প্রতিদিনই ইট-পাথরের রাক্ষসী যায় চুমি।

এবার বইয়ের নামকরণ কবিতার একটি পঙতি দিয়ে ইতি টানবো-“একটা আকাশ একটা ঘুড়ি”
অামার একটা আকাশ ছিল একটা ছিল ঘুড়ি /যার ছিল না সীমারেখা যার ছিল না জুড়ি। থাকতো বাঁধা সুতোয়/ছুটতো না ছল-ছুঁতোয়/সেই ঘুড়িটা আকাশনীলে করতো মাখামাখি /সূর্যটাকে চোখ ইশারায় করতো ডাকাডাকি।

তোরাব আল হাবিব কিশোর কবিতার সব নিয়মনীতি মেনে লিখেছেন ঠিকই তবে পরবর্তীতে নতুন বিষয় নিয়ে তাকে পরীক্ষা -নিরীক্ষা করতে হবে আমি আশাবাদী তিনি সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবেন।

বইটি উৎসর্গ করেছেন কিশোর কবিতার অন্যতম প্রাণপুরুষ ফারুক নওয়াজ কে।

বইটির সুন্দর প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী ধ্রুব এষ। সুন্দর অলংকরণ করেছেন শিল্পী মদন কুমার। নতুন হিসেবে মদন ভালো কাজ করেছেন। তার পরবর্তী কাজগুলো যেন এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে দোয়া থাকলো।

“পাপড়ি” প্রকাশ তার প্রকাশনার ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি করেনি যার জন্য ঝকঝকে ছাপায় বইটি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। বইটির মূল্য রাখা হয়েছে ২৩০ টাকা।
বইটি দেশের সৃজনশীল বইয়ের দোকানে পাওয়া যাবে। পাশাপাশি রকমারিতে খোঁজ নিলে পাওয়া যাবে।

জয় হোক কিশোর কবিতার। জয় হোক তোরাব আল হাবীবের।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2016 Paprhi it & Media Corporation
Developed By Paprhihost.com
ThemesBazar-Jowfhowo