১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ রাত ৪:২৩

কামরুল আলমের শিশুতোষ ছড়ার বই- ছোটোদের ছুটি

আহমদ জুয়েল
  • আপডেট সোমবার, আগস্ট ২৪, ২০২০,

কামরুল আলম বর্তমান সময়ের একজন পরিচিত শিশুসাহিত্যিক। শিশু-কিশোরদের নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করছেন তিনি। ছোটদের তিনি ভালোবাসেন হৃদয় উজাড় করে।  ছোটদের জন্যে একসময় সম্পাদনা করতেন ‘কচি’, এখন নিয়মিত বের করছেন ‘পাপড়ি শিশু-কিশোর পত্রিকা’।  ছোটরা ভালোবেসে তাঁকে ‘কচি ভাইয়া’ বলেই ডাকতো। সিলেটের দৈনিক প্রভাতবেলার  ছোটদের পাতা-অঙ্কুর সম্পাদনা করেছেন দীর্ঘদিন। সবমিলিয়ে ছোটদের নিয়েই কামরুল আলমের ছুটোছুটি। তাঁর লেখা ছড়া, কিশোর কবিতা, গল্প, সায়েন্স ফিকশন সবই  ছোটদের জন্যে। প্রায় এক ডজন বই প্রকাশিত হয়েছে ইতোমধ্যে। সবগুলোই ছোটদের উপযোগী। ‘ ছোটদের ছুটি’ কামরুল আলমের লেখা একটি চমৎকার শিশুতোষ ছড়ার বই। ১৪টি ছড়ার নান্দনিক এই আয়োজনে চমৎকার অলঙ্করণ নিয়ে বইটির সঙ্গী হয়েছেন নিসা মাহজাবীন। প্রচ্ছদ করেছেন ইমরোজ আরেফিন।
‘ ছোটদের ছুটি’ নামটি দেখলেই ছোটরা আকৃষ্ট হয়। এ দিক থেকে শিশুতোষ বইয়ের সার্থক নামকরণ করতে পেরেছেন লেখক। বইয়ের শেষ ছড়াটির শিরোনামও ‘ছোটদের ছুটি’। বইয়ের বোঝা কাঁধে নিয়ে প্রতিদিন রুটিন মাফিক স্কুলে যাওয়া-আসাটা খুবই বিরক্তিকর। মাঝখানে টিফিন পিরিয়ডে রুটি আর চাওমিন খাওয়াটা তো আরও কষ্টকর।  ছোটরা চায় হইহুল্লোড় করে ছুটে বেড়াতে। বনে বনে ফুলপাখি আর বৃক্ষলতার সঙ্গে খেলা করতে চায় সবাই। শিরোনামের ছড়ায় ছড়াকার এই কথাগুলোই বলেছেন-
‘স্কুুলেতে চাই না যেতে / চাই না খেতে রুটি
কানাবগির ছায়ের মতো / চাই  ছোট এক পুঁটি।
ইট-দালানের চারদেয়ালে/ বাস্তবতার খামখেয়ালে
চাই না খেতে আর অযথা/ কষ্টে লুটোপুটি।
গাছগাছালির ডালে ডালে/ ছন্দ-ছড়ার তালে তালে
চাই বনেতে ঘুরতে যেতে/ চক্ষু মেলে দুটি।
স্কুুলেতে চাই না যেতে/ চাই না টিফিন-রুটি
ছন্দ-ছড়ার বই এসেছে/  ছোটদের আজ ছুটি।’ ( ছোটদের ছুটি)

সত্যি,  ছোটদের ছুটি দিয়ে দিলেন কামরুল আলম। বাস্তবতা বড়ই কঠিন।  ছোটদের ছুটি দিলেও বনে বনে ছুটে বেড়ানোর সুযোগ কোথায়? ছড়াকার তাঁর বইয়ের পাতায় পাতায় নিয়ে এসেছেন সবুজ আমবাগান, দীঘির জলে শাপলা-শালুক, বিল-হাওরের পদ্মফুল, নদীর তীরের কাশফুল, বাসার বারান্দায় দাঁড়িয়ে পাখিদের ছুটে চলার দৃশ্য, শীতের সকালে ঘাসের ডগায় জমে থাকা বিন্দু বিন্দু শিশিরের কণা, হলুদ ধানের শীষের সঙ্গে নবান্নের পিঠাপুলির উৎসব, গ্রামের বাড়িতে হাঁসের ছানার ছুটোছুটি আরও কত কী! শুধু কি তাই?  ছোটদের নিয়ে তিনি নীল আকাশে তারার দেশেও যেতে চান। তিনি বলেন-
‘নীল আকাশে যাবো আমি/ চাঁদ-তারাদের দেশে
তারাগুলো ভিড় জমাবে/ আমার কাছে এসে।
বলবে সবাই, কে গো তুমি/ কেমন আজব লোক
তোমার দেখি মাথার নিচে/ দুইটা মোটা চোখ!
আমি তখন লজ্জা পাবো/ ঠিক লুকাবো মুখ
আনন্দে মন ভরবে আমার/ ভরবে হৃদয়-বুক।’ (তারার দেশে)

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গর্ব। একাত্তরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তি-সাহস আর আত্মত্যাগেই আমরা পেয়েছি লাল-সবুজের বাংলাদেশ। লাখো শহিদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল এ দেশের সবুজ মাটি। ‘রক্তে ভেজা সবুজ মাটি’ ছড়ায় সেই কাহিনী বর্ণনা করেছেন ছড়াকার-
‘একাত্তরে ঘরে ঘরে/ কষ্ট এলো কষ্ট
আজও ভাসে ইতিহাসে/ সেই কাহিনী স্পষ্ট।
শত্রুসেনা পাকবাহিনী/ করলো অবরুদ্ধ
বাধ্য হয়ে বাঙ্গালিরা/ করলো শুরু যুদ্ধ।
বাংলাদেশের তরুণ-বুড়ো/ যুদ্ধে হলো শুদ্ধ
ডিসেম্বরে পাকিস্তানি/ রুদ্ধ হলো রুদ্ধ।
রক্তে ভেজা সবুজ মাটি/ মুক্ত হলো মুক্ত
পৃথিবীতে বাংলাদেশের/ নামটি হলো যুক্ত। (রক্তে ভেজা সবুজ মাটি)

শিশু মনের ভাবনাগুলো চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন ছড়াকার কামরুল আলম। তিনি বলেন-
‘একটা আকাশ কেমন করে/ একলা থাকে দাঁড়িয়ে
নাগালটা তার যায় না পাওয়া/ হাত দুটোকে বাড়িয়ে।
আকাশটা তার প্রান্ত মেলায়/ গ্রাম থেকে গ্রাম ছাড়িয়ে
পাই না খুঁজে তার কিনারা/ হাজারটা পথ মাড়িয়ে!’ (আকাশ)

এরকম চমৎকার মজাদার সব ছড়া দিয়ে সাজানো ‘ ছোটদের ছুটি’ যা পাঠ করে কেবল অন্তরে ভালোলাগাই ছুঁয়ে যায় না বরং ফুল-পাখি, পাহাড়-নদী এবং পুরো বাংলাদেশের প্রতি জেগে ওঠে ভালোবাসা। এমন সুন্দর-চমৎকার বইটি প্রকাশিত হয়েছে পাপড়ি প্রকাশ থেকে। মূল্য ষাট টাকা মাত্র। বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে আরেকজন স্বনামধন্য শিশুসাহিত্যিক কবি জাকির আবু জাফরকে। বইটির বহুল প্রচার কামনা করছি।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2016 Paprhi it & Media Corporation
Developed By Paprhihost.com
ThemesBazar-Jowfhowo