৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ সন্ধ্যা ৭:৫৮

কী আছে ‘রূপান্তর’ নাটকে ।। কামরুল আলম

কামরুল আলম
  • আপডেট বুধবার, এপ্রিল ১৭, ২০২৪,
নাটক ইদানীং দেখি না। আগেও যে খুব একটা দেখতাম, ব্যাপারটা এমন না। তবে নাটকের ভেতরের গল্পগুলো ব্যতিক্রম মনে হলে দেখি। ওয়ালটনকে বয়কট করার ঘোষণা দেখে ‘রূপান্তর’ নাটকটি দেখার ইচ্ছে হলো। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান তাদের চ্যানেল থেকে নাটকটি সরিয়ে ফেলেছে ইতোমধ্যে। তবে কপি পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন বেনামি চ্যানেলে। একটি চ্যানেলে দেখলাম নাটকটি। বলা যায় অনেকদিন পরেই নাটক দেখা।
নাটকটি একজন চিত্রশিল্পীকে ঘিরে। শিল্পীর নাম সৌরভ। সৌরভ চরিত্রে অভিনয় করেছেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা ফারহান আহমেদ জোভান। একজন খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী সৌরভের প্রেমে পড়েন রিমঝিম। রিমঝিম চরিত্রে অভনয় করেছেন সামিরা খান মাহি। নাটকে সৌরভকে বেশিরভাগ সময় বিভিন্ন মানুষের পোট্রেট আঁকতেই দেখা যায়। রিমঝিমের পোট্রেটও এঁকেছিলেন সৌরভ।
নাটকে দেখা যায়, সৌরভের বেশভূষায় থাকছে শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ, কপালে টিপ, গলায় পুঁতির মালা, হাতে চুড়ি, নাকে নথ, কানে দুল, চোখে গাঢ় কাজল, মাথায় পরচুল, হাতে নেইলপলিশ ইত্যাদি। কারো সঙ্গে কথা বলতে চায় না। স্টুডিওর ভেতরে ছবি আঁকে। ম্যানেজার আকাশ তারই বন্ধু। আকাশকে বলে রেখেছে কেউ যেন তার সঙ্গে দেখা করতে না আসে। কিন্তু রিমঝিম তার সঙ্গে জোর করে দেখা করে। সৌরভের মেয়েদের মতো সাজপোশাক দেখে অবাক হয় রিমঝিম।
সৌরভের বেশভূষা তার কাছে অস্বাভাবিক লাগলেও শেষমেষ তার প্রেমে পড়ে যায় রিমঝিম। রিমঝিমের মনে হয়, কোনো নারীর ছবি আঁকতে গিয়ে সৌরভ সম্ভবত নিজে নারীর বেশ ধরেছে! রিমঝিম অনেক চেষ্টা করে সৌরভের সঙ্গে ভাব জমানোর। সৌরভ ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তাকে স্টুডিও থেকে বের করে দেয়।
এরপর রিমঝিম পোট্টেট আঁকানোর জন্য আবার যায়। ম্যানেজার আকাশের কাছে ১০৮টি ফটোগ্রাফি দিয়ে বলে তার এই ছবিগুলোর পোট্টেট লাগবে। সে এক লক্ষ টাকা এডভান্সও করে। কিন্তু সৌরভ এ কাজ করতে অস্বীকার করে। সৌরভ বুঝতে পারে রিমঝিম টাকা দিয়ে তাকে কিনে ফেলতে চাচ্ছে।
রিমঝিম নাছোড়বান্দা হয়ে নানা কথা বলে। সৌরভ তখন রাজি হয়। বলে, প্রতি মাসের এক তারিখে রিমঝিমের বাসায় ৫টি করে পোট্টেট পৌঁছে যাবে।
রিমঝিম এবার নিজের মাকে পাঠায় সৌরভের কাছে। মা নিজের মেয়ের জন্য সৌরভকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। সৌরভ প্রত্যাখ্যান করে। সৌরভ রিমঝিমের মাকে সরাসরি জানিয়ে দেয়, এ বিয়ে করা তার পক্ষে সম্ভব না। তবে রিমঝিম নাছোড়বান্দা। সে তার মাকে জানায় বিয়ে করলে সে সৌরভকেই করবে।
রিমঝিমের মা সৌরভকে জোরাজুরি করেন। কেন বিয়ে করবে না জানতে চান। তখন সৌরভ জানায়, ১৯৮৯ সালে নরসিংদীতে একটি ট্রেন দুর্ঘটনায় মোট ১৭০ জন লোক মারা যান। সেসময় সৌরভের বয়স ছিল এক বছর। ভাগ্যক্রমে সেই দুর্ঘটনায় সৌরভ বেঁচে গেলেও তার মা মারা যান। কিন্তু তার পাশে তিনজন মহিলার লাশ পড়েছিল। দুজন বোরকাওয়ালা মহিলা এবং একজন সিঁদুরওয়ালা। কেউ বুঝতে পারেনি কোন মহিলার সন্তান সে। পরে তাকে উদ্ধার করার পর শিশু সদনে পাঠানো হয়, সেখানেই বড় হয়েছে সৌরভ। কিন্তু সে হিন্দু নাকি মুসলিম এটা সে নিজেও জানে না!
সৌরভ রিমঝিমের মাকে জানায়, এবার নিজের মেয়েকে এই কথা গিয়ে বলেন। বলেন যে, আমি হিন্দু নাকি মুসলিম নিজেই জানি না। আশা করি আপনার মেয়ে আর আমাকে বিয়ে করতে চাইবে না।
কিন্তু রিমঝিম নাছোড়বান্দা। সে তার মামাকে পাঠায়। মামা সৌরভকে অনেক বুঝান। সৌরভ তখন বলে, এমন কিছু আছে যাতে সে এ বিয়ে করতে পারবে না। সে বলে, আমার সুখ, দুঃখ, ডিপ্রেশন এগুলোর কথা আপনারা জানেন না।
রিমঝিমের মামা জোরাজুরি করায় সৌরভ একজন ডাক্তারের ভিজিটং কার্ড দিয়ে বলে, উনাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করুন। তিনি আমার চিকিৎসক। আপনারা সবই বুঝতে পারবেন।
রিমঝিমের মামা ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করেন। ডাক্তার জানান, সৌরভ হরমোনজনিত এক সমস্যায় আক্রান্ত।
ডাক্তারের ভাষায়, “সৌরভ ডিজঅর্ডার অব সেক্স ডেভেলপমেন্ট (ডিএসডি)-তে আক্রান্ত। একটি শিশুর জন্মগতভাবে জেনেটিক সেক্স থাকে, আরেকটি থাকে ফেনোটাইপিক সেক্স। এই দুইয়ের মাঝে অসামাঞ্জস্য থাকলে সেক্স প্রকাশিত হয় না।”
ডাক্তার জানান, সৌরভ ‘জেনেটিক্যালি’ একজন মেয়ে। শুরুতে তার মেয়েলি হরমোন বিকশিত না হলেও, পরবর্তীতে সেটি বিকশিত হতে থাকে। অর্থাৎ, সৌরভ দেখতে পুরুষের মতো হলেও তিনি একজন নারী।
এটাই ছিল ‘রূপান্তর’ নাটকের সারকথা।
অনেক বিতর্কিত এ নাটকটির রিভিউ এখানে শেয়ার করার অর্থ, অনেকেই এ নাটকটি দেখেননি। না দেখে অনেক ধরনের মন্তব্য করছেন। নাটকের সারকথা জানার পর নেতিবাচক অথবা ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে আরও ভালো আলোচনা-সমালোচনা করতে পারবেন। আমি এই নাটকে শিক্ষণীয় কোনো দিক দেখতে পাইনি। এটি একটি গল্প মাত্র। সমাজে এ ধরনের চরিত্র হয়তো আছে। যদি থাকে, তাহলে নাটক তো সমাজেরই দর্পণ! আর যদি না থাকে তাহলে এটা একজন নাট্যকারের কল্পনা।
নাট্যকারের বক্তব্য-
নাটকটির নির্মাতা রাফাত মজুমদার রিংকু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার কিছু বলার নেই। কারণ, এই নাটক আমি কোনও এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য করিনি। আমি একজন একা মানুষের গল্প বলার চেষ্টা করেছি। যে মানুষটা হরমোন জটিলতায় ভুগছেন। এটা তো এক ধরনের শারীরিক জটিলতা, যাতে আমাদের কারোর হাত নেই। আমি তো নাটকটির মাধ্যমে সফল কোনও সম্পর্কের গল্প বলিনি। আমি দেখানোর চেষ্টা করেছি হরমোনজনিত কারণে একজন মানুষের ক্রমশ একা হয়ে যাওয়ার গল্প। অথচ সেই বিষয়টিকে অনেকেই ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। আমি এর জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত এবং হতাশ। এই সরল গল্পটি যদি আমরা না গ্রহণ করি, তাহলে নতুন গল্প বলবো কেমন করে?’

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2016 Paprhi it & Media Corporation
Developed By Paprhihost.com
ThemesBazar-Jowfhowo