সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাকর্মী ও তার সুবিধাভোগী শ্রেণীর টার্গেট এখন সিলেট সীমান্ত। সীমান্ত এলাকায় এসে ওৎপেতে থাকেন ওপারে পার হওয়ার জন্য। যে কোন মূল্যে তারা প্রবেশ করতে চান ভারতে। কিন্তু অনেকেই ধরা পড়ছেন বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে। সর্বশেষ গত তিন দিনে অন্তত চারজনকে আটক করা হয়েছে। আর সীমান্তে নজরদারিও বাড়িয়েছে বিজিবি।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর আওয়ামী লীগের পলায়নকারী নেতা অনেকের চোখ পড়েছে সিলেটের বিভিন্ন সীমান্তে।
ভারতে পালানোর নিরাপদ রুট হিসেবে তারা বেছে নিয়েছেন এই অঞ্চলকে। এখন পর্যন্ত মন্ত্রী, এমপিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের উল্লেখ্যযোগ্য কিছু নেতা সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে দেশ ত্যাগ করেছেন।
এদিকে শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের একটি অভিজাত হোটেল থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রভাবশালী কাউন্সিলর ও আওয়ামীলীগ নেতা বিএম সিরাজুল ইসলামকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। হোটেল থেকে তিনি ভারতে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহন করছিলেন বলে জানা গেছে।
গত বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের বড়গ্রাম সীমান্ত থেকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় মো. ওবায়দুল হক (৩৩) নামে এক যুবককে আটক করেছে বিজিবি। এসময় তাকে সযোগিতাকারী স্থানীয় দুজনকেও আটক করা হয়। পরে শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে আদালতের নির্দেশে এ তিনজনকে কারাগারে পাঠানো হয়।
সিলেট সীমান্ত হয়ে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করতে গিয়ে প্রাণ হারান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না। গত ২৬ আগস্ট পূর্ব জৈন্তিয়া পাহাড়ের দোনা ভোই গ্রামের একটি সুপারি বাগান থেকে পান্নার অর্ধগলিত মৃতদেহ উদ্ধার করে ভারতের মেঘালয় পুলিশ।
এরআগে ২৩ আগস্ট রাতে কানাইঘাটের ডোনা ডোনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় বিজিবির হাতে আটক হয়েছিলেন সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক। গ্রেপ্তারের পর আলোচিত এ সাবেক বিচারপতি জানিয়েছিলেন, সীমান্তে দালাল ধরে তিনি ভারতে প্রবেশের চেষ্টা চালান। পরে ওই দালালরাই তাকে মারধর করে সঙ্গে থাকা ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা নিয়ে গেছে।
৭ সেপ্টেম্বর জৈন্তাপুর সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে আটক হন জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল আহমদ। গোয়াবাড়ি সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে তাকে আটক করে বিজিবি।
সূত্র জানায়, সরকার পতনের পর পর সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাড়ি জমান জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ ও মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক নাঈম আহমদ। ওই সময় গুঞ্জন উঠে- সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারত পাড়ি জমিয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। এরপর একে একে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করতে থাকেন।
সূত্র আরও জানায়, সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট রণজিৎ সরকার, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ ও বিধান কুমার সাহা, মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খান, সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাস মিঠু, জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সিলেট সীমান্ত ব্যবহার করে ভারতে প্রবেশ করেন। যাদের অধিকাংশ এখন যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছেন।
এর আগে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পৌঁছান সিলেট সিটি করপোরেশনের সদ্যসাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও সিলেট-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব। বর্তমানে তারা ভারত থেকে যুক্তরাজ্যে চলে গেছেন বলে ঘনিষ্টজনরা নিশ্চিত করেছেন। আনোয়ার ও হাবিব দু’জনই যুক্তরাজ্য প্রবাসী।
একাধিক সূত্রের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, গরু ও চিনি চোরাচালানের সাথে জড়িত সীমান্তের দুইপাড়ের চোরাকারবারীরা মূলত নেতাদের ভারতে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছে। সীমান্ত পারাপারের জন্য দুইপাড়ের চোরাকারবারিরা লাখ লাখ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে।