২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ দুপুর ২:২০

মুহাম্মদ আল মমিন-এর ১০টি ছড়া / পদ্য

মুহাম্মদ আল মমিন
  • আপডেট সোমবার, আগস্ট ২৪, ২০২০,

০১.
#বাংলার_খোকা

: বল খোকা ‘এক’।
: এক।
: লাল-নীল ঘুড়িগুলো চোখ মেলে দেখ;
তারপরে তুলি-রঙে সেই কথা লেখ!
: বলো বাবা কী যে!
মোবাইলে কতো গেম খেলি নিজে নিজে!
ধেই ধেই নাচি শুনে মিউজিক ডিজে!

: বল দেখি ‘দুই’।
: দুই।
: পালতোলা নৌকাতে চড়েছিস তুই?
ছলছলা ঢেউগুলো আয় গিয়ে ছুঁই!
: বাবা তুমি দিনে দিনে হয়ে গেছ বোকা!
ডিজিটাল দেশে আমি ডিজিটাল খোকা!
কতো মজা জানো নাতো কম্পিউটারে,
মনে কতো দোলা দেয় সুখ বারে বারে!

: বল খোকা ‘তিন’।
: তিন।
: ঘাসপোকা মাঠ জুড়ে নাচে ধিন ধিন!
ওরা কি রে ডিজিটাল? নাকি রে প্রাচীন?
কখনো কি দেখেছিস সবুজের মায়া?
রাখালের বাঁশি আর পাকুড়ের ছায়া?
পাখিদের কাছে কতো আমাদের ঋণ!
চোখ মেলে দেখেছিস ঝলমলে দিন?
ডিজিটাল নারে তুই, বাংলার খোকা,
মূলটারে ভুলে গেলে থেকে যাবি বোকা!

: বলো বাবা ‘চার’!
: চার।
: সূর্যের আলোটাকে ভুলবো না আর!
————————————–

০২.
#হ্যাচ্চো

: হ্যাচ্চো!
হাটে নিয়ে কাঁচকলা
কয় টাকা বেচছো?

তাই দিয়ে এনেছো কি
চাল-ডাল-নুন?
পান-পাতা-চুন?
বলো কত বেচছো?
হ্যাচ্চো!

: ধুর ছাই, দূরে যাও
দিয়ো নাকো হাঁচি,
চারিদিকে মহামারি
ভয়ে ভয়ে বাঁচি!

এই নাও চাল-আটা,
এই নাও সুজি,
প্যাও প্যাও বাবু-সোনা
ঘুমিয়েছে বুঝি?

: এই থামো, নিচে নামো
গোসলটা সারো,
হাতে নাও সাবান আর
সেনিটাইজারও।
ভালোমতো ধুয়ে সব
উঠোনেই নাড়ো।

: আহা! সোনা-বউ তুমি
কতো সচেতন,
ভালোবেসে তোমাকেই
দিয়েছি এ মন!
————————————-

০৩.
#জ্বেলে_দাও_অগ্নি

পৃথিবীতে আলো পেতে যতো ধরো বায়না,
স্বার্থই খোঁজে সবে ভালো কেউ চায় না;
ওঁৎ পেতে থাকে আরও শকুনি ও হায়না!

আছে ভূত, ডাইনী যে, আছে শাঁকচুন্নি,
ধ্বংসের খেলা করে ভুলে গিয়ে পুণ্যি;
ধর্মকে ভাগ করে ওরা শিয়া সুন্নি!

মহামারি, দুর্যোগে ওরা করে ধান্দা,
পুলিশেও দাবড়ায় নিতে শুধু চান্দা;
ভাবখানা যেন ওরা কত খাঁটি বান্দা!

দুর্যোগে করে ওরা ধেই ধেই নৃত্য,
গরীবের ত্রাণ কেড়ে গড়ে তোলে বিত্ত;
ভুখা-অসহায় দেখে কাঁদে নাতো চিত্ত!

তাই বলি এক হও ভাই-বোন-ভগ্নী,
হায়েনার মসনদে জ্বেলে দাও অগ্নি!
————————————–

০৪.
#ভেলকিবাজি

যতই বলিস, আসল খবর
বলবে না আজ সব তোরে,
থাকবে কিছু রিপোর্ট জমা
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
চাইলে এমন ভেলকিবাজি
করতে পারিস রপ্ত রে!

বাইরে দেখি লম্বা লাইন
শতেক মানুষ ঝিম পাড়ে,
কেউ নমুনা নেয় না তাদের
স্বাস্থ্য-বিভাগ ডিম পাড়ে!
কোন সে দেশের মন্ত্রণালয়
এমন আজব ‘থিম’ পারে?

প্রথম থেকেই দেখছি সবে
কত্তো কিছুর স্বল্পতা,
বুক ফুলিয়ে বলেন তিনি
মোটেই তো নয় অল্প তা।
সবচে’ সেরা এদেশ জানিস?
নয়রে কোনো গল্প তা!

বাংলামা তোর সবুজ আচল
কতোই সুখে নাড়িস মা?
আর কতকাল অসৎ লোকের
দেখতে হবে কারিশমা?
“খুব হয়েছে, থামনা এবার”
বলতে কি তুই পারিস মা?

আজব রকম ভেলকিবাজি
এই করোনার উৎসবে,
আর কটা দিন গেলেই দেখিস
মরেই হবো ভূত সবে!
আকাশ-বাতাস দাপিয়ে যাবো
ভূত ও ভূতের পুত সবে!
————————————–

০৫.
#ছিড়েছি

হেন করেছি তেন করেছি ছিড়ছি কতো ‘ছাল’!
সকল কিছুই বেতাল ছিল, আমরা দিছি তাল!
লঙ্কা ভরে ঝাল দিয়েছি,
পুকুর, ডোবা, খাল দিয়েছি,
রাতের ভোটেও ফাল দিয়েছি; শক্ত আমার ঠ্যাঙ!
তোমরা হলে ক্যাবলা-হাকিম, আস্ত কোলাব্যাঙ!

ঘরের দুয়ার বন্ধ রেখে দিলাম ছেড়ে সাপ!
ভয় করো না অন্ধকারে, লাফ দিও না লাফ!
কেউ বলো না পাপ করেছি,
একলা অনুতাপ করেছি,
কিংবা কাউকে মাফ করেছি; থাকুক বেঁচে জেদ!
আমার সুরে গাওনা গীতি কিসের ভেদাভেদ?
————————————–

০৬
#গানের_পাখি
[কণ্ঠসম্রাট এন্ড্রু কিশোর স্মরণে]

মেঘপরিদের ডানায় চেপে একলা অবশেষে,
গানের পাখি হারিয়ে গেল দূর অজানার দেশে।
“ডাক দিয়াছেন দয়াল” তাঁরে, আর কি ঘরে থাকে?
ভক্তকূলের পরাণ কাঁদে, হাত বাড়িয়ে ডাকে!

“এই আছি, এই নাই”-এ সুরে মন হয়েছে খাঁটি,
হায়রে “আমার সারা দেহ খেয়ো ওগো মাটি!”
জীবন নামের গল্প জানি অল্প বাকি আছে,
‘প্রেমের কাঙাল’ হয়ে তবু ঘুরছি মায়ার পাছে!

সবাই তো চায় ভালোবাসা, তাই ঘুরেছি কতো,
মধুর প্রেমের সুবাস দিতে গোলাপ ফুলের মতো।
চলতে পথে দুদিন থেমে নিলাম গলায় মালা,
“সঙ্গের সাথী কেউ হইলো না” প্রেমের ঘরে তালা!

গানের পাখির জন্যে কেঁদে হারাই দিশা-হুশ,
“হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলেই ঠুস!”
“আমার বুকের মধ্যিখানে” ভালোবাসার ঘর,
সেইখানেতে থাকবে বেঁচে সুরের জাদুকর!
——————————————————–

০৭.
#বাতাস_ধরে_খাই

মজার খেলা খেলবো এসো জুঁই চামেলি ফুল,
কদম, কেয়া, গোলাপ, জবা, শাপলা ও বকুল।

আয়রে ছুটে নীল-ভোমরা, লক্ষ্মীপেঁচা আয়,
রঙিন ডানার প্রজাপতি, আমার আঙিনায়!

আয়রে ইলিশ, সরপুঁটিরা, পাবদা, মাগুর, কৈ,
সবাই মিলে করবো মজা, আনন্দ হইচই!

আয়রে হালুম, বাঘের মাসি, আয়রে হাতি, ঘোড়া,
জেব্রা, জিরাফ, হরিণ, বানর, কোথায় গেলি তোরা?

চলরে সবে করবো খেলা খালের বাঁকে বাঁকে,
কলমিলতার দেশে যেথায় বাতাস মিশে থাকে!

দু’হাত ভরে টপ-টপা-টপ বাতাস ধরে খাই,
পেটের ক্ষুধা তাড়িয়ে দিতে ধিন-তানা-না গাই!
——————————————————–

০৮.
#মেঘের_চিঠি
[প্রয়াত ছড়াকার আলম তালুকদার স্মরণে]

একটি দুটি তিনটি জ্বলে নীল আকাশের তারা,
মন যে বাঁধনহারা,
মেঘের ডানায় ভর দিয়ে সে ছুটছে পাগলপারা!

একটি দুটি তিনটি করে পেঁজা-মেঘের তুলো,
রঙিন স্বপ্নগুলো,
ঝুঁড়ির ভিতর নিলাম ভরে জোছনা-ধোয়া ফুলও!

একটি দুটি তিনটি করে তারার মালা বুনি,
দু’কান পেতে শুনি,
করছে ওরা কানাকানি, হারিয়ে গেছে গুণী!

একটি দুটি তিনটি মালা তারা, মেঘের ফুলে,
বানাই হাতে তুলে–
গুণীর খোঁজে ছুটছি আমি নদীর কূলে কূলে!

একটি দুটি তিনটি করে পাপড়ি-পাতা ঝরে,
মন যে কেমন করে,
উদাস উদাস দুপুরগুলো মেঘের চিঠি পড়ে!
—————————————————

০৯.
#অভিমান
[প্রিয়কবি মাহমুদ বুলবুল ভাইকে নিবেদিত]

সাগর বলে জল দেবো না,
আকাশ বলে মেঘ,
বাতাস বলে নেই তো আমার
দৌড়ে ছোটার বেগ।

সাধক বলে সুর দেবো না,
বৃক্ষ বলে ফুল,
গাঁয়ের বধূ পরবে নাকো
সাতনরি-হার, দুল!

পান-খাওয়া-ঠোঁট লাল হবে না
শুনছো বলো কেউ?
নদীর নাকি বইবে না আর
ছলাৎছলাৎ ঢেউ!

পদ্য-ছড়ায় থাকবে না আর
আগের মতো তাল,
লঙ্কা নাকি পানসে হবে,
লাগবে না আর ঝাল!

রঙ-তুলিতে রাঙবে না আর
খুকুর আঁকা সব,
সকাল নাকি আর দেবে না
পাখির কলরব!

বুলবুলি আর বউটুবানি
গাইবে নাকো গান,
ভালোবেসে কে ভাঙাবে
নিগূঢ় অভিমান?

আনন্দে নয়, দুঃখেই কেবল
নাচবো তাধিন-ধিন,
মেনেই নিলাম এখন আমার
একলা চলার দিন!
——————————————————–

১০.
#ঝুঁকি_বাড়ে

মাস্ক টাস্ক খুলে ফেলে
খায় টেনে বিড়ি,
কী যে বিচ্ছিরি,
ধোঁয়াগুলো বেয়ে চলে বাতাসের সিড়ি!
গোল গোল ধোঁয়াগুলো ডিগবাজি খায়,
ঘাড়ুয়ার ঘাউড়ামি রোখা নাতো যায়!

পান-টান মুখে পুরে
ছুড়ে মারে পিক,
আহা চারিদিক!
করোনার ছেলেপুলে হাসে ফিকফিক!
ফুসফুসে ঢুকে ওরা কিলবিল করে,
ঘাড়ুয়ার কলিজায় খামচিয়ে ধরে!

চা-টা আর কফি খায়
গায়ে গায়ে ঘেঁষে,
কতো ভালোবেসে!
বাঙালিরা বীর সাজে করোনার দেশে।
এইভাবে দিনে দিনে ঝুঁকি বাড়ে আরও,
ঘাড়ুয়া তো সুখে ঘোরে, বুক কাঁপে কারও!

ভালো যদি চাও,
ঘাড়ুয়ার ঘাড়ে ধরে সমানে পিটাও!

***
মুহাম্মদ আল মমিনের জন্ম ১৫ জানুয়ারি ১৯৮১ । তাঁর পিতা  মরহুম আব্দুস ছোবহা এবং মাতা মরহুমা হাজেরা বেগম। তিনি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার চকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। মধুপুর, টাঙ্গাইলের ‘মিজান ক্যাডেট স্কুল’-এর সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত মুহাম্মদ আল মমিন ছোটোবেলা থেকেই লেখালেখির সঙ্গে জড়িত। ১৯৮৮ সালে চতুর্থ শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে ‘বন্ধু আমার’ কিশোর উপন্যাস লেখার মাধ্যমে লেখালেখিতে হাতেখড়ি। নব্বই দশকের শেষদিকে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন তিনি। তাঁর প্রকাশিত শিশুকিশোর গল্পগন্থ ‘বাচ্চাভূত কাচ্চাভূত’। 

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2016 Paprhi it & Media Corporation
Developed By Paprhihost.com
ThemesBazar-Jowfhowo