২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ রাত ১২:২৭

বাংলাদেশের জান্নাতুল যখন অস্ট্রেলিয়ার

সোনার সিলেট ডটকম
  • আপডেট সোমবার, মার্চ ৮, ২০২১,

পেশাদার ক্রিকেটার। বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল ও ব্যাংকসটাউন স্পোর্টস নারী ক্রিকেট দল’—ইনস্টাগ্রামে ক্রিকেটার জান্নাতুল ফেরদৌস নিজের পরিচয়টা এভাবেই দিয়েছেন। ক্রিকেটার হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় থিতু হয়েছেন বছর দুই হলো। তবু তাঁর কাছে এখনো বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলে খেলার পরিচয়টাই আসল। লাল–সবুজ জার্সিতে আবার মাঠে নামার স্বপ্নটাও পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি তাঁর চোখ থেকে।

তবে এ মুহূর্তে জান্নাতুল যতটা না বাংলাদেশের, তার চেয়ে বেশি অস্ট্রেলিয়ার। স্বপ্ন বলুন, লক্ষ্য বলুন, তাঁর সবই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটকে ঘিরে। দেশে যদি আর সুযোগ না–ই আসে, জান্নাতুল স্বপ্ন দেখেন একদিন ক্রিকেট খেলবেন অস্ট্রেলিয়ার নারী দলের হয়ে। নিজেকে তৈরিও করছেন সেভাবেই।

বাংলাদেশ দলে জান্নাতুল প্রথম ডাক পান ২০১৬ সালের আয়ারল্যান্ড সফরে। তবে জাতীয় দলের হয়ে প্রথম খেলার সুযোগ মেলে ২০১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপজয়ী বাংলাদেশ নারী দলেরও সদস্য ছিলেন জান্নাতুল। কিন্তু এরপরই ব্রাত্য হয়ে পড়েন জাতীয় দলে

ঠিক ওই সময়ই জান্নাতুলের ডাক পড়ে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ক্রিকেট ক্লাব থেকে, যে দলে খেলেন অস্ট্রেলিয়া নারী দলের ক্রিকেটার র‍্যাচেল হেইন্স ও অ্যালিসা হিলির মতো তারকারা। সুযোগটা লুফে নিতে দেরি করেননি স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার জান্নাতুল।

এত অল্প বয়সে অচেনা দেশের অজানা পরিবেশে কতটা মানিয়ে নিতে পারবেন, সে অনিশ্চয়তা তো ছিলই। তবু জান্নাতুল পাড়ি দেন অনিশ্চিত গন্তব্যের পথে, ‘আমি কখনো দল ছাড়া একা কোথাও যাইনি। আমার বয়স তখন মাত্র ১৮। অনেক বড় সিদ্ধান্ত ছিল সেটা আমার জন্য। কেউ চিন্তাও করতে পারবে না আমি কিসের মধ্য দিয়ে গিয়েছি।’

জান্নাতুলের মা শুরুতে মেয়ের মতো বড় স্বপ্ন দেখতে পারেননি। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই নিজের সংকল্পে স্থির থাকতে শেখা জান্নাতুল লক্ষ্য থেকে সরে যাননি। মাকে বুঝিয়েছেন। নিজের স্বপ্নটা দেখিয়েছেন পুরো পরিবারকেই, ‘মা প্রথমে রাজি ছিলেন না। পরে তাঁদের বোঝাই। তাঁরা বোঝেনও। আমি জানতাম এটা অনেক বড় ঝুঁকি ছিল। কিন্তু এটাও জানতাম যে চ্যালেঞ্জটা জিততে পারলে তার পুরস্কার আমি পাবই।’

সাহসী সিদ্ধান্তটা নেওয়ার সময় জান্নাতুল মানসিক শক্তি পেয়েছেন তাঁর বিকেএসপির কোচ ফাতেমা তুজ জোহরা ও মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের কাছ থেকে। জান্নাতুল বলছিলেন, ‘বিকেএসপির কোচ ফাতেমা আপা অনেক বেশি অনুপ্রেরণা দিয়েছেন আমাকে। সালাউদ্দিন স্যারও অনেক সাহায্য করেছেন। তাঁরা আমাকে সুযোগটা নিতে বলেন।’

ইংরেজি ভাষা জানা থাকায় অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পেরেছেন শুরু থেকেই। জান্নাতুলই বলেন, ‘যেকোনো বিষয়ই আমি সহজে শিখে যাই। আমাকে কুইক লার্নার বলতে পারেন (হাসি)।’

সিডনির ক্রিকেটের অলিগলি চেনাটাও কঠিন হয়নি বাংলাদেশের তরুণী ক্রিকেটারের জন্য। আর্থিকভাবেও এখন স্বাবলম্বী তিনি। অন্য সব পেশাদার ক্রিকেটারের মতো ভিনদেশে নিজের আয়েই চলছে জান্নাতুলের জীবন, ‘এখানে আমি নিজেরটা নিজেই করতে পারি। পরিবারের কাছ থেকে আমাকে কিছু নিতে হয় না।’

প্রথম বছর থেকেই অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাটে-বলে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন জান্নাতুল। তাঁর ছোঁয়াতেই শিরোপাখরা কাটিয়ে গত বছর নিউ সাউথ ওয়েলস প্রিমিয়ার লিগের ওয়ানডে প্রতিযোগিতা জেতে সিডনি ক্রিকেট ক্লাব। অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দিয়ে জান্নাতুল ছিলেন টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়।

তবে নতুন মৌসুমে দল পাল্টে তিনি চলে যান ব্যাংকসটাউন ক্লাবে। এই ক্লাবে সতীর্থ হিসেবে পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের ক্রিকেটার অ্যাশ গার্ডনারকে। এবারও জান্নাতুলের ক্লাব ব্যাংকসটাউন আছে শিরোপা জয়ের পথে।

অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে মিশে গিয়েও জান্নাতুলের মনে স্বপ্ন, আবার যদি সুযোগ আসে বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলার! আর যদি বাংলাদেশ থেকে ডাক পাওয়ার অপেক্ষাটা না–ও ফুরায়, তাহলেও তিনি হতোদ্যম হবেন না। জান্নাতুলের আরেক চোখ যে অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলে! অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব পেয়ে একদিন খেলবেন সে দেশের জাতীয় দলেও—এই স্বপ্নই এখন বেশি দেখেন জান্নাতুল।

নিজের ভবিষ্যৎ লক্ষ্যের কথা বলতে গিয়ে বলছিলেন, ‘বাংলাদেশে আমার এখনো ভালো সুযোগ আছে। অস্ট্রেলিয়ায় এত নারী ক্রিকেটারের মধ্যেও আমি একটা জায়গা করে নিয়েছি। কিন্তু আমি আমি এখানেই থামতে চাই না। দেশে যদি আমি আর সুযোগ না পাই, এখানে (অস্ট্রেলিয়ায় দলে) সুযোগ পেলে তো সেটা নেওয়াই উচিত হবে।’বাংলাদেশের জান্নাতুল তখন পুরোপুরিই হয়ে যাবেন অস্ট্রেলিয়ার।

সূত্র: প্রথম আলো

এসএসডিসি/বিএম

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2016 Paprhi it & Media Corporation
Developed By Paprhihost.com
ThemesBazar-Jowfhowo