বাংলাদেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতুর পাশাপাশি ঢাকা থেকে মা’ওয়া হয়ে ফরিদপুর জে’লার ভাঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আর মাত্র দুই মাস বাকি। তবে ইতোমধ্যেই এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরির পাশাপাশি নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও নসিমন-করিমন। এসব যানবাহন প্রতিনিয়ত এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করার কারণে ঘটছে দু’র্ঘ’ট’না। এতে করে প্রা’ণহানির পাশাপাশি পঙ্গুত্ব বরণ করছে সাধারণ যাত্রীরা।
হা’ই’কো’র্টের নির্দেশ অমান্য করে ফরিদপুর জে’লার ভাঙ্গা দক্ষিণ পাড় বাসস্ট্যান্ড, এক্সপ্রেসওয়ের ফ্লাইওভা’রের নিচে থেকে প্রতিদিন শত শত ইজিবাইক চলাচল করে থাকে। এছাড়া মহাসড়কে চাঁদাবাজিরও অ’ভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে গত ৫ এপ্রিল বাংলা ট্রিবিউন-এ ‘এক্সপ্রেসওয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ইজিবাইক’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। টনক নড়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের।
গত বুধবার ৬ এপ্রিল রাতে নানা অনিয়মের অ’ভিযোগে ভাঙ্গা হাইওয়ে থা’নার ভা’রপ্রাপ্ত কর্মক’র্তা জাহাঙ্গীর আলমকে প্রত্যাহার করা হয়। এদিকে একই সময়ে ভাঙ্গা হাইওয়ে থা’নায় নতুন ভা’রপ্রাপ্ত কর্মক’র্তা হিসেবে এ এস এম আসাদুজ্জামান যোগদান করেন। যোগদানের পর গতকাল বৃহস্পতিবার ৭ এপ্রিল সকালে হাইওয়ে থা’নায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন নবাগত ওসি আসাদুজ্জামান। সংবাদ সম্মেলনে তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। আর তিনি যে বক্তব্য রাখেন সেই বক্তব্য নিয়েই আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে স্থানীয়দের মাঝে।
লিখিত বক্তব্যের শেষ লাইন দুইটিতে লেখা ছিল, ‘হাইওয়ে থা’না পু’লিশ ব্যতীত অন্য কোনও সংগঠন বা ব্যক্তি মহাসড়কে চাঁদাবাজি করলে তার দায়-দায়িত্ব হাইওয়ে পু’লিশ নেবে না।’ এ বিষয়টি নিয়ে সংবাদকর্মী ও স্থানীয় এলাকাবাসীর মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। অনেকেই ফেসবুকে বিষয়টিকে ভাই’রাল করে বিভিন্ন বক্তব্য দিতে থাকেন। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের অ’ভিযোগ, মহাসড়কে থ্রি হুইলার বন্ধ ও চাঁদাবাজি দূর করা। এসব দেখভালের দায়িত্ব হাইওয়ে পু’লিশের।
নবাগত ওসি এ এস এম আসাদুজ্জামান লিখিত বক্তব্যে বলেন, ইতোপূর্বে এই থা’নার অফিসার ইনচার্জের দায়িত্বে থেকে যারা বিভিন্ন পরিবহন, বিভিন্ন টোকেন, কিংবা মান্থলি (মাসোহারা) বাণিজ্যের সঙ্গে জ’ড়ি’ত ছিলেন বা যাদের নামে উৎকোচ আদায় হতো, আজ থেকে সেগুলো বন্ধ বলে ঘোষণা করছি। যদি অ’ত্র থা’নার কোনও পু’লিশ সদস্য এসবের সঙ্গে জ’ড়ি’ত থাকে তার দায় তাকেই বহন করতে হবে। মহাসড়কে কোনও রকম চাঁদাবাজি চলবে না ম’র্মে অঙ্গীকার করছি। তবে বেপরোয়া গতি, ফিটনেস বিহীন যানবাহন, ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যতীত মোটরযান চালানো এবং মোটরসাইকেলে হেলমেট ব্যতীত তিন জন আরোহী, অ’বৈ’ধ থ্রি-হুইলার এসবের বি’রু’দ্ধে অ’ভিযান অব্যাহত থাকবে। ‘হাইওয়ে পু’লিশ ব্যতীত অন্য কোনও সংগঠন বা কোনও ব্যক্তি মহাসড়কে চাঁদাবাজি করলে তার দায় হাইওয়ে পু’লিশ গ্রহণ করবে না।’
এদিকে অ’ভিযোগ উঠেছে, ইতিপূর্বে যারা হাইওয়ে থা’না পু’লিশের সঙ্গে থেকে থ্রি-হুইলার-সহ সড়কের বিভিন্ন স্পটে চাঁদাবাজির সঙ্গে জ’ড়ি’ত তাদের সঙ্গে নিয়েই নবাগত ওসি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দা আকরাম হোসেন বলেন, বিভিন্ন অনিয়মের অ’ভিযোগে ওসি জাহাঙ্গীর আলমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। নতুন ওসি আসাদুজ্জামান যোগদান করেই সংবাদ সম্মেলন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছে গেছেন।
তিনি আরও বলেন, নতুন ওসি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তার ওই লিখিত বক্তব্যের কাগজ ভাই’রাল হয়ে গেছে। ওই পত্র থেকে দেখেছি, ওসি বলেছেন, হাইওয়ে পু’লিশ ব্যতীত অন্য কোনও সংগঠন বা ব্যক্তি মহাসড়কে চাঁদাবাজি করলে তার দায় হাইওয়ে পু’লিশ নেবে না। তার মানে কি দাঁড়ালো? চাঁদাবাজি অন্য কেউ করতে পারবে না, শুধুমাত্র হাইওয়ে পু’লিশ চাঁদাবাজি করতে পারবে। একজন ওসির এমন দায়িত্বহীন বক্তব্যে আম’রা হতাশ।
এ ব্যাপারে হাইওয়ে পু’লিশ মাদারীপুর রিজিয়নের ফরিদপুরের পু’লিশ সুপার হামিদুল আলম বলেন, ওসি জাহাঙ্গীর আলমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তার স্থলে এ এস এম আসাদুজ্জামানকে দায়িত্ব নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কি কারণে কোন বিষয়ের ওপর নবাগত ওসি আসাদুজ্জামান সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিষয়টি জানা নেই, বিস্তারিত জেনে আপনাদের জানাবো। এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে ভাঙ্গা হাইওয়ে থা’নার নবাগত ওসি আসাদুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।