সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় জ্বালানি তেল পেট্রোল ও ডিজেল এবং এলপি গ্যাস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কৈলাশটিলা এলপিজি প্ল্যান্ট (আরপিজিসিএল প্ল্যান্ট)-এর উৎপাদন ববন্ধ রয়েছে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে। ফলে রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
তবে অবশেষে সেই প্ল্যান্টে ফের দেখা দিয়েছে সম্ভাবনা। শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) আরপিজিসিএল প্লান্ট পরিদর্শন করেছেন জ্বালানি ও খণিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব হাফিজুর রহমান। এসময় তিনি এ সম্ভাবনার কথা জানান।
এসময় সচিব বলেন- সরকারের উন্নয়ন খাতে বিঘ্ন ঘটে বছরের পর বছর অচলবস্থার সৃষ্টি হবে এমনটা তো ঠিক নয়। সমস্যা থাকতে পারে, তবে তার সমাধান বের করতে হবে। সবকিছুতে এই সরকারের সফলতা রয়েছে। আশা করি এই প্লান্ট চালুর ব্যাপারেও সফল হবো।
জানা যায়, ১৯৯৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে গোলাপগঞ্জ উপজেলা সদরের টিকবাড়ি এলাকায় জ্বালানি তেল পেট্রোল, ডিজেল এবং এলপি গ্যাস উৎপাদনকারী ‘কৈলাশটিলা এলপিজি প্ল্যান্ট’ স্থাপন করা হয়। গোলাপঞ্জের দাড়িপাতনস্থ ‘কৈলাশটিলা এমএসটিই গ্যাস ফিল্ড’র খনি থেকে উত্তোলিত মূল্যবান এনজিএল (ন্যাচারাল গ্যাস লিকুইড) কাজে লাগাতে পেট্রোবাংলার অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আরপিজিসিএল (রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লি.) প্ল্যান্টটি স্থাপন করে। গোলাপগঞ্জ কৈলাশটিলা এমএসটিই গ্যাসফিল্ডের খনি থেকে উত্তোলিত এনজিএল (ন্যাচারাল গ্যাস লিকুইড) থেকে পেট্রোল ও এলপি গ্যাস এবং খনিজ গ্যাসের উপজাত কনডেনসেট থেকে পেট্রোল ও ডিজেল উৎপাদন করে কৈলাশটিলা এলপিজি প্ল্যান্ট (আরপিজিসিএল প্ল্যান্ট)। প্রতিষ্ঠানটি পেট্রোল ও ডিজেল বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন-বিপিসি কে এবং এলপি গ্যাস পাশেই স্থাপিত ‘এলপি গ্যাস বটলিং কারখানা’য় সরবরাহ করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আরপিজিসিএল প্ল্যান্ট দৈনিক ১ লক্ষ লিটার পেট্রোল উৎপাদন করে থাকে। এছাড়া, দৈনিক ২০/২৫ হাজার লিটার ডিজেল এবং ১৫/১৭ মেট্রিক টন এলপি গ্যাস উৎপাদন করে প্রতিষ্ঠানটি। পেট্রোল, ডিজেল ও এলপি গ্যাস উৎপাদন থেকে প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আয় ৪০ থেকে ৪৫ কোটি টাকা।
কিন্তু ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। বিপিসি একটি নির্দিষ্ট মানের নিচে পেট্রোল ক্রয় করবে না মর্মে জানিয়ে দিলে ওই সময় থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে, আরপিজিসিএল প্ল্যান্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আরপিজিসিএল এর উৎপাদিত এলপি গ্যাসের উপর নির্ভর করে স্থাপিত ‘এলপি গ্যাস বটলিং কারখানা’র উৎপাদনও বন্ধ রয়েছে। একই কারণে গোলাপগঞ্জের দাড়িপাতনস্থ কৈলাশটিলা এমএসটিই গ্যাসফিল্ড প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ এনজিএল পুড়িয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, এনজিএল সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় একে সরাসরি প্রক্রিয়াজাতকরণ প্ল্যান্টে পাঠাতে হয়, অন্যথায় পুড়িয়ে ফেলতে হয়। গোলাপগঞ্জের দাড়িপাতনস্থ কৈলাশটিলা এমএসটিই গ্যাসফিল্ড প্রতিদিন ৫৭ হাজার লিটার এনজিএল সরাসরি আরপিজিসিএল প্ল্যান্টকে দিয়েছে। আরপিজিসিএল প্ল্যান্ট ‘এনজিএল’ থেকে উৎপাদন করে পেট্রোল ও এলপি গ্যাস। এখন আরপিজিসিএল প্ল্যান্ট বন্ধ থাকায় গ্যাসফিল্ড ‘এনজিএল’ পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন এর বাজারমূল্যে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা।