ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের কারণে চাপ বাড়ে সড়ক-মহাসড়কে। অতিরিক্ত যাত্রী আর যানবাহনের কারণে দেশের সড়কগুলোতে বাড়ে দুর্ভোগ। এর মধ্যে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে যাত্রীর চাপ তুলনামূলক কম থাকায় প্রতিবার ঈদযাত্রায় দুর্ভোগও খানিকটা কম থাকে। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন।
এবার সিলেট-ঢাকা মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। উন্নয়ন কাজের কারণে এবারের ঈদযাত্রায় এ মহাসড়কে দুর্ভোগ বাড়ার আশঙ্কা করছেন যাত্রী ও চালকরা।
সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের ধীরগতিতে মোটেও সন্তুষ্ট নন এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যাত্রী ও পণ পরিবহনকারী চালকেরা। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও এক বছরেরও বেশি ব্যবধানে মাত্র ৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। জমি অধিগ্রহণও এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। ফলে নির্ধাতি সময়ে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তা এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা অবশ্য জানিয়েছেন, মূল সড়কে এখন উন্নয়ন কাজ হচ্ছে না। কাজ চলছে সড়কের পাশে। ফলে ঈদে ভোগান্তি হলেও তা খুব একটা বেশি হবে না।
বুধবার এ মহাসড়কের সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমার দাউদপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চার লেনে উন্নীতকরণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করে মহাসড়কের পাশে মাটি ভরাটের কাজ চলছে। খননযন্ত্র (এক্সাভেটর) দিয়ে মাটি ভরাট করা হচ্ছে। এ কারণে সড়কে লেগে আছে যানবাহনের জট।
মহাসড়কে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মিতালী বাসের চালক আফরোজ আহমদ বলেন, ‘উন্নয়ন কাজের জন্য এখনই সড়কে যানজট লেগে থাকে। উন্নয়ন কাজের পাশাপাশি মহাসড়কে অবৈধ পার্কিংয়ের কারণেও যানজট বেড়েছে। ঈদ ঘনিয়ে এলে যানজট আরও বাড়বে।’
নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী চত্বর পর্যন্ত ২১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৯২৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর চায়না (লংজিয়ান রোড কনস্ট্রাকশন লিমিটেড) ও দেশি প্রতিষ্ঠান ম্যাকস ইনফ্রাস্টাকচার লিমিটেড নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চার বছরের (নির্মাণকাল) চুক্তি সই করে। গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি নির্মাণ কাজ শুরু করে তারা। গত সাত মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যাত্রামুড়ায় কালভার্ট নির্মাণে পাইলিং স্থাপন ও দুটি স্পটে বালু ভরাটের কাজ শুরু করে।
মহাসড়কটির সিলেট অংশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে জমি অধিগ্রহণ, মাটি ভরাট ও ব্রিজ সম্প্রসারণের কাজ চলছে। প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৬ শতাংশ। ভূমি অধিগ্রহণ এখনও শেষ হয়নি। এরই মধ্যে নির্মাণ শুরু হয়েছে নতুন ব্রিজ ও কালভার্ট। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
বাসচালক সেলিম মিয়া বলেন, ‘উন্নয়ন কাজ চলার কারণে ধীরগতিতে গাড়ি চালাতে হয়। ফলে নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যায় না। আবার অনেক জায়গায় যানজটও লেগে থাকে, ফলে এমনিতেই এ সড়কে ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের।’
তিন বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিতে সড়কের পাশে স্তুপ করা রাখা মাটি গলে সড়কে কাদার সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেড়েছে। ঈদের মৌসুমে যানবাহনের চাপ বাড়লে ঝুঁকি ও দুর্ভোগ আরও বাড়বে।’
বুধবার বাসে করে ঢাকা থেকে সিলেটে আসেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রাজেশ দাশ।
তিনি বলেন, ‘অফিসের কাজে আমাকে প্রায়ই ঢাকা-সিলেট যাওয়া-আসা করতে হয়। উন্নয়ন কাজ চলায় আগের তুলনায় এখন এই সড়কে দুর্ভোগ বেড়েছে। বৃষ্টির দিনে সড়কে কাদা জমে আর রোদ পড়লে ধুলোয় একাকাকার হয়ে যায়। এছাড়া যানজটও অনেক বেড়েছে। ঈদের সময় তা আরও বাড়তে পারে।’
তবে ঈদে যাত্রীর চাপ বাড়লেও দুর্ভোগ খুব একটা বাড়বে না জানিয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন বলেন, ‘মূল সড়কের কাজ শুরু হয়নি। এটি অক্ষত রয়েছে। এছাড়া ঈদের আগে উন্নয়ন কাজ সীমিত করে আনা হবে। ফলে ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ তেমন বাড়বে না।
‘এছাড়া সড়কের যেসব স্থানে ভাঙাচোরা রয়েছে সেসব স্থানে ঈদের আগে মেইনটেইন্যান্স করা হবে। আর সড়কের পাশের বাজারগুলোতে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের পরিচালক এ কে মোহাম্মদ ফজলুর করিম বলেন, ‘এখন ভূমি অধিগ্রহণ ও নতুন কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের অগ্রগতি ৬ শতাংশ। তবে ঈদে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ মূল লেনে তেমন একটা সমস্যা নেই।’
উন্নয়ন কাজ ছাড়াও এই সড়কে ভোগান্তি বাড়াচ্ছে তিন চাকার ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন। তাছাড়া উল্টো পথে যান চলাচল ও যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা তো আছেই। এ ছাড়াও মহাসড়কের পাশের বাজারগুলোতে পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায়ও বাড়ছে যানজট।
এ প্রসঙ্গে হাইওয়ে পুলিশ সিলেট অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার শেখ মাসুদ করিম বলেন, ‘মহাসড়কে তিন চাকার গাড়ি ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধে পুলিশ তৎপর রয়েছে। ঈদ মৌসুমে এই তৎপরতা আরও বাড়ানো হবে। এছাড়া সড়কে গাড়ি পার্কিং বন্ধেও পুলিশ তৎপর থাকবে।’