সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে হাওরের বোরো ফসল নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন কৃষক। হাওরে বছরে একবার ফলে বোরো ধান। কৃষকের শ্রমে-ঘামে হাওরে ফলানো ধান গোলায় ওঠে। কিন্তু এতে বাঁধা তৈরি করে ঝড়-বৃষ্টি। শিলাবৃষ্টি হলে যেন আর রক্ষাই নেই। ফসল নিয়ে তাই দুশ্চিন্তার যেন শেষ নেই কৃষকের।
এদিকে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাস চলমান। এমন সময় হাওরে শিলাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও আগাম বন্যার আশঙ্কা থাকে। বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে কৃষকের মাথায় হাত। এছাড়াও চলতি বছরে হাওরে নড়বড়ে ফসলরক্ষা বাঁধ কৃষকের জন্য হতে পারে মরণফাঁদ, এমনটি মনে করছেন উপজেলার বোরো ধান চাষীরা।
উপজেলার বিভিন্ন হাওরের কৃষকদের সাথে কথা হলে তারা জানান, কিছু কিছু হাওরে আগাম জাতের বোরো ধান কাটা শুরু হলেও সম্পূর্ণ হাওরের বোরো ধান কাটতে সময় লাগবে আরও এক মাস । চলতি বছরের ফাল্গুন মাসে যথাসময়ে বৃষ্টি ও চৈত্র মাসের আগাম বৃষ্টিতে ফসলের ফলন ভালো হওয়ার কথা থাকলেও নানা মুখি বিপর্যয়ের আশঙ্কা এখন তাড়া করছে কৃষকদের।
শিলাবৃষ্টি ও আগাম বন্যার হুমকি কৃষকদের চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। হাওরে ফসলরক্ষায় নির্মিত নড়বড়ে বাঁধের উপর ভরসা নেই তাদের। কৃষকেরা জানান, তারা শুধু বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল। এই বোরো ফসলের ক্ষতি হলে পুরো বছর অনাহারে, অর্ধাহারে দিন কাটাতে হবে।
মধ্যনগর উপজেলা কৃষি বিভাগের কার্যক্রম পাশের ধর্মপাশা উপজেলা থেকে পরিচালিত হয়। ধর্মপাশা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলায় এবার বোরোধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩১ হাজার ৯০২ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিকটন ধান; যার সম্ভাব্য মূল্য ধরা হয়েছে ৫০৫ কোটি টাকা।
এদিকে ইতোমধ্যেই হাওরের কৃষি নিয়ে জরুরি ঘোষণা দিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।
গতকাল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ধর্মপাশার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম(ফেইসবুক) পেইজ থেকে কৃষকদের উদ্দেশ্যে জরুরি ঘোষণায় তিনি উল্লেখ করেন, ‘সম্মানিত কৃষক ভাইয়েরা, অতিবৃষ্টি, আগাম পাহাড়ি ঢল, শিলাবৃষ্টি সহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দূর্যোগ হতে হাওরের প্রাণ বোরো ধান রক্ষার্থে দ্রুত(শতকরা ৮০ ভাগ ধান পরিপক্ক হলে) ধান কর্তন করে ঘরে তুলুন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মীর হাসান আল বান্না গণমাধ্যম কে জানান ‘এপ্রিল মাস চলমান। এ মাসে ঝড়-বৃষ্টি বেশী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কৃষকের সোনালী ফসল যাতে প্রাকৃতিক দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সে জন্যই অগ্রীম সতর্ক করে দিয়েছি। এর সাথে হাওরে শতকরা ৮০ ভাগ ধান পরিপক্ক হলে তা কর্তনের জন্য কৃষকদের তাগিদ দিচ্ছি।’