২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ সকাল ৯:৪৯

জামায়াতের নতুন রাজনৈতিক দল বিডিপির চেয়ারম্যান ছাত্রদলের, সেক্রেটারি শিবিরের

সোনার সিলেট ডেস্ক
  • আপডেট রবিবার, অক্টোবর ৩০, ২০২২,

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে জামায়াত নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি’। বুধবার (২৬ অক্টোবর) নির্বাচন কমিশনে আবেদন জমা দেওয়ার আগে দলটির কোনও কার্যক্রমের কথা জানা যায়নি। আবেদনকৃত নতুন দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন ও সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে মো. কাজী নিজামুল হকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আবেদনে দলের প্রতীক হিসেবে ‘আনারস’ চেয়েছে নতুন দল বিডিপি।

বুধবার নির্বাচন কমিশনে আবেদন জমা দেওয়ার পর বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির দুই শীর্ষনেতার সঙ্গে কথা বলেছে বাংলা ট্রিবিউন। চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন ও সেক্রেটারি জেনারেল মো. কাজী নিজামুল হক—দুজনেই তাদের দলের সঙ্গে ‘জামায়াতের কোনও সম্পর্ক নেই’ বলে দাবি করেন।

অ্যাডভোকেট আনোয়ার ইসলাম চাঁন জানান, তিনি কখনও জামায়াতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তবে জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের একটি থানার আমির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আনোয়ারুল ইসলাম সরাসরি দলের কোনও পদে ছিলেন না। তিনি শুভানুধ্যায়ী পর্যায়ের ব্যক্তি।’

বুধবার সন্ধ্যায় আলাপকালে আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন বলেন, ‘আমি নব্বইয়ের আন্দোলনে একজন সক্রিয় কর্মী ছিলাম। আমি ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হল ছাত্রদলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। পরবর্তী সময়ে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনীতিতে ছিলাম। আমার সঙ্গে জামায়াতের সাংগঠনিক কোনও সম্পর্ক নেই।’

জামায়াতের ঢাকা মহানগর ও ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, বিডিপির সেক্রেটারি জেনারেল মো. কাজী নিজামুল হক ছাত্র শিবিরের ঢাকা আলিয়া শাখার সভাপতি ছিলেন। তিনি ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বেশ কয়েক বছর ছাত্র শিবিরের অভ্যন্তরীণ সমস্যায় যে ২০-২২ জন পদত্যাগ করেছিলেন, তাদের মধ্যে কাজী নিজামুল হক রয়েছেন। তার ডাক নাম নাঈম। সর্বশেষ বিডিপি সেক্রেটারি নিজামুল হক ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের কর্ম পরিষদের সদস্য ছিলেন।

জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ককে ‘নতুন ইতিহাস’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন কাজী নিজামুল হক। বুধবার বিকালে তিনি বলেন, ‘ওইগুলা যা ছিলাম এখন সব ইতিহাস। এখন নতুন পার্টি।’ তিনি জামায়াতের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন কিনা বা জামায়াত থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে কিনা, এ প্রশ্নের উত্তরও মেলেনি।

‘আপনি দক্ষিণের কর্ম পরিষদের সদস্য—এই পদ থেকে পদত্যাগ করে আবেদন করেছেন, নাকি যেমন ছিলেন তেমনই’, এমন প্রশ্নে নিজামুল হকের মন্তব্য, ‘কীসের কর্ম পরিষদের সদস্য, এখন তো আমি এই পার্টির লোক।’

যেকোনও দল নিবন্ধনের আবেদন করার আগে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় থাকে। আপনাদের দল একেবারে হঠাৎ করেই আবেদন করেছে। এর কারণ কী— এমন প্রশ্নের জবাবে নিজামুল হক বলেন, ‘আমরা বহুদিন ধরে কাজ করছি। এতদূর কীভাবে এগোলাম কাজ না করলে।’

বাংলাদেশের এমন কোনও এলাকা আছে যেখানে বিডিপির অফিস পাওয়া যাবে, প্রশ্নে বিডিপির সেক্রেটারি বলেন, ‘অসংখ্য জেলা-উপজেলায় পাওয়া যাবে।’ দুই-একটা জেলার নাম বলেন? উত্তরে নিজামুল হক নাঈম বলেন, ‘এখনই বলছি না। আনুষ্ঠানিকভাবে বলবো।’

দলের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন বলেন, ‘আমার সঙ্গে শুধু ছাত্র শিবির না, ছাত্রলীগ ও অন্যান্য দলের নেতা পর্যায়ের অনেকেই রয়েছেন। আমরা আসলে কনসাইজের ভিত্তিতে লোক জড়ো করেই দল গঠন করেছি।’

নিবন্ধনের জন্য বুধবার নির্বাচন কমিশনে আবেদনপত্র জমা দেন বিডিপির নেতারানিবন্ধনের জন্য বুধবার নির্বাচন কমিশনে আবেদনপত্র জমা দেন বিডিপির নেতারা

নেতাকর্মীদের চাপ সামলাতে নতুন দলের অনুমোদন দিয়েছে জামায়াত

জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের একটি সূত্র জানায়, মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) রাতে পুরানা পল্টনের একটি ভবনে জামায়াতের ঢাকা মহানগরের নেতাকর্মী ও সংগঠকরা মিলে বিডিপির কাগজপত্র চূড়ান্তসহ ফাইলিং করে। জামায়াতের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই দলটির প্রকাশ্যে আসার পেছনে একাধিক কারণ উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা।

জামায়াতের ঢাকা মহানগরের একজন প্রভাবশালী সদস্য জানান, মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে জামায়াতের অবস্থান পরিষ্কার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও প্রকাশ্যে আসেনি। এ প্রক্রিয়াটি স্থগিত পর্যায়ে রয়েছে। পাশাপাশি দলের মজলিসে শুরার পক্ষ থেকে নতুন দল করার চাপ ছিল। পরবর্তীকালে সেই চাপও কমে আসে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্ট। এর পাঁচ বছর পর ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নিবন্ধন বাতিলের পর ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিছু আসনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নেতারা।

জানা গেছে, জামায়াতের পক্ষ থেকে এরইমধ্যে ৫ সদস্যের একটি কমিটি করে নতুন দল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৯ সালে। পরে শুরা সদস্যরা এ বিষয়ে নিষ্ক্রিয় থাকলেও কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি অংশ চেয়েছেন—যেভাবেই হোক নতুন দল সামনে আসুক। যে কারণে নেতাকর্মীদের চাপের মুখে নতুন দল করার পক্ষে মত দিয়েছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।

যেভাবে নতুন দলে যাবেন জামায়াতের নেতারা

বুধবার সকালে জামায়াত আমিরের ঘনিষ্ঠ একজন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘নতুন দল করার প্রশ্ন এসেছে কয়েকটি কারণে। প্রথমত, আগামী নির্বাচনে যদি বিএনপির কোনও জোট না থাকে, তাহলে যেন দলের নেতারা একটি প্রতীকে নির্বাচন করতে সক্ষম হন। দ্বিতীয়ত, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল থাকায় যদি কোনোভাবেই ইসি নিবন্ধন না দেয়, তাহলে কী করবে। সে কারণে একটি দলের নিবন্ধন রাখা ও প্রতীক বরাদ্দ রাখা।’

প্রসঙ্গত, জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন সংক্রান্ত মামলাটি দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

‘তৃতীয়ত, দলের বাজেটিং। প্রাথমিকভাবে জামায়াতের মূল ফান্ড থেকে একটি বরাদ্দ দেওয়া হবে নতুন দলকে। পরবর্তীকালে দল হিসেবে দাঁড়ালে তাদের নিজেদের ফান্ডে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হবে’—বলছিলেন জামায়াত-আমিরের ঘনিষ্ঠ এই নেতা। ‘কারণ, নতুন দলকে কিন্তু নির্বাচন কমিশনে তার আর্থিক সূত্র জানাতে হবে’—যোগ করেন তিনি।

বাংলা ট্রিবিউন

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2016 Paprhi it & Media Corporation
Developed By Paprhihost.com
ThemesBazar-Jowfhowo