আর্জেন্টিনার যতদূর চোখ যায়, নীল-সাদা রঙের বন্যা। রাস্তা, পার্ক, বাড়ির ছাদ সর্বত্র কাতারে কাতারে মানুষ। নীল-সাদা জাতীয় পতাকা গায়ে জড়িয়ে নাচছে, গাইছে, লাফাচ্ছে, যাকে পাচ্ছে জড়িয়ে ধরছে। গিটার বাজাচ্ছে কেউ মনের আনন্দে, কেউ গলায় ঝোলানো ড্রাম পেটাচ্ছে। যারা ড্রাম যোগাড় করতে পারেনি, তারা প্রাণপণে পিটিয়ে চলেছে টিনের ক্যানস্তারা, রঙের কৌটো, যা মিলেছে হাতের কাছে। একটানা বেজে চলেছে লক্ষ গাড়ির হর্ন, কানে তালা লাগানো স্লোগান। মেসির নামে জয়ধ্বনি। ফাইনাল শেষে আর্জেন্টিনাজুড়ে এই একটাই ছবি।
দেশটির রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ওবলিস্কো সৌধের সামনেই সবথেকে বড় জমায়েতটা হয়। সেখানেই খেলা দেখেন লাখো মানুষ। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে দেশের জয় আসতেই শুরু হয়ে যায় সেলিব্রেশন। প্লেট নদীর পাড়েও দেখা যায় একই ছবি।
ফাইনাল দেখতে দিয়েগো ম্যারাডোনার বাড়িতে জড়ো হয়েছিল দলে দলে মানুষ। ম্যারাডোনার বাড়ি আগে থেকেই কার্যত অধিগ্রহণ করে ফেলেছিলেন সমর্থকরা। আলাদা করে বড় স্ক্রিনে বিশ্বকাপ দেখানোরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ম্যাচ শেষে গোটা বাড়িটাই যেন ফুটবল সমর্থকরা দখল করে নেন। বাড়ির স্যুইমিং পুলে নেমে ঝাপিয়ে, সাঁতার কেটে চলে জয়োচ্ছাস। বুয়েনস আইরেসের কেন্দ্রস্থল ওবেলিক্স স্কোয়ারও হয়ে উঠে জনসমুদ্র।
একই ছবি মেসির হোমটাউন রোজারিওতেও। সেখানেও আর্জেন্টিনা সমর্থকরা মাতেন উৎসবে। হাজারে হাজারে মানুষ জড়ো হয়েছিলেন রোজারিওর কেন্দ্রস্থলে। ড্রাম বাজিয়ে, গান গেয়ে, নেচেকুঁদে রাতভর পার্টি চলেছে সেখানেও। আর সেই সঙ্গে চলেছে মেসির নামে জয়ধ্বনি, ম্যারাডোনার নামে জয়ধ্বনি।
এই মুহূর্তে আর্থিক ভাবে খুবই খারাপ অবস্থায় রয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি। দেশের সবথেকে বড় সমস্যা এখন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি। পাশাপাশি আর্জেন্টিনার মুদ্রারও অবমূল্যায়ন ঘটেছে। কমেছে মানুষের আয়। সাড়ে চার কোটির জনসংখ্যার দেশের চল্লিশ শতাংশ মানুষই দরিদ্র। কিন্তু ফ্রান্সের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ জয় আর্জেন্টিনার মানুষের সেই সমস্ত হতাশা দূর করে দিয়েছে।
৩৬ বছর, অপেক্ষার প্রহর তো কম নয়। এতো বছরের দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর যাদের জন্য গোটা দেশ ভাসছে আনন্দে, সেই নায়কদের বরণ করে নেওয়ার জন্য যেন জাঁকজমকের কমতি না হয়, সেটি নিশ্চিত করবে আর্জেন্টিনার জনগণ।
বিশ্বকাপ ফাইনাল শেষ কাতারেই একপ্রস্থ উদযাপন করেছেন আর্জেন্টিনার বিশ্বজয়ী খেলোয়াড়রা। কাতারে উপস্থিত প্রায় ৮০ হাজার আর্জেন্টাইনের সঙ্গে ছাদখোলা বাসে ট্রফি নিয়ে প্যারেড করেন মেসি-ডি মারিয়ারা।
তবে আসল উদযাপন বাকি এখনও, দেশের মাটিতে পা রাখার পর বুয়েন্স এইরেসের চিত্র কেমন হতে পারে তা কল্পনা করাও দুঃসাধ্য।