সিলেটের বন্ধ থাকা পাথর কোয়ারী খুলে দেওয়ার জন্য এবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি সুপারিশ পাঠিয়েছেন। বুধবার (২৬ অক্টোবর) গেজেটভুক্ত পাথর কোয়ারি সমূহের ব্যবস্থাপনা এবং পাথর কোয়ারির তালিকা হালনাগাদ করে অবিলম্বে চালু করার জন্য জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর ডিও দিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি। দীর্ঘদিন ধরে সিলেটের পাথর কোয়ারী সংশ্লিষ্টরা আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে আসলেও স্থানীয় সাংসদ ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর অবস্থান পরিষ্কার ছিল না। অবশেষে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী তাঁর আধা সরকারি পত্রে সবিস্তারে লিখে তাঁর অবস্থান জানান দেন। মন্ত্রীর এ সুপারিশের খবর জানার পর সিলেটের পাথর কোয়ারী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অভিনন্দন জানিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ে প্রদত্ত ডিও সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। মন্ত্রী ইমরান আহমদের লেখা ডিওটি হুবহু দৈনিক জৈন্তা বার্তার পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হলো।
মন্ত্রী তার আধা সরকারি পত্রে উল্লেখ করেন, যেহেতু আমার নির্বাচনী এলাকায় অধিকাংশ পাথর কোয়ারি জাফলং বিছনাকান্দি, ভোলাগঞ্জে অবস্থিত। এই সব এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান ও জীবন-জীবিকা পাথর কোয়ারীর সাথে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত, তাই আমার কিছু সুচিন্তিত মতামত কমিটির বিবেচনার জন্য তুলে ধরলাম।
১। কোয়ারী সমুহ থেকে সুদীর্ঘকাল ধরে পাথর উত্তোলন অব্যাহত থাকলেও বিগত কয়েক বছর যাবত সরকারি নির্দেশনায় তা বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত কোয়ারী সমূহ সচল থাকায় অত্র এলাকার বেশীর ভাগ মানুষ কোয়ারি সংশ্লিষ্ট কাজের সাথে জড়িত ছিল। কোয়ারী বন্ধ হওয়ায় হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান বন্ধ হওয়ায় তারা বেকার হয়ে পড়ে। আমার নির্বাচনী এলাকায় কোন শিল্প কারখানা গড়ে না উঠায় কোয়ারি সমুহ-ই শ্রমিকদের একমাত্র কর্মসংস্থানের উৎস হিসেবে কাজ করেছে।
২। কোয়ারী সমূহ, ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত হওয়ায় প্রত্যেক বছর পাহাড়ী চলের সময় উজান থেকে নেমে আসা পানির সাথে প্রচুর পরিমান পাথর আসে। কয়েক বছর কোয়ারি বন্ধ থাকায় ও পাথর উত্তোলন না করায় বর্তমানে অনেক পাথর নদীর প্রবেশ মুখে স্তুপ হয়ে আটকে আছে। এর কারণে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধা হয়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে। ফলে জাফলং কোয়ারীর পাশ্ববর্তী খাসিয়াপুঞ্জি, বিছনাকান্দি কোয়ারীর পাশ্ববর্তী বগাইয়া ও বিছনাকান্দি মৌজা এক ভোলাগঞ্জ কোয়ারি কালাইরাগ ও কালাসাদক মেীজাসহ নদীর তীরবর্তী আশপাশের গ্রামসমুহে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে ও এলাকসমুহ নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে।
৩। দীর্ঘদিন পাথর কোয়ারি বন্ধ থাকায় এবং বেকারত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় এলাকার মানুষের মধ্যে অস্থিরতা, অসহায়ত্ব ও হতাশা বৃদ্ধি পায় এবং তারা বিভিন্ন অনৈতিক ও অসামাজিক কাজের সাথে জুড়িয়ে পড়ে এতে সামগ্রিক ভাবে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে।
প্রবাসী কল্যান মন্ত্রী শেষে মতামত ব্যক্ত করে বলেন, আমি মনে করি যে, জাফলং কোয়ারির উৎস মুখ হতে পিয়াইন নদী খনন করলে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধিসহ, নদীর পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে। এবং আকষ্মিক পাহাড়ী ঢলের পানি দ্রুত নিস্কাশন হবে। ফলে হাজার হাজার এ জমির ফসল বন্যার পানি হতে রক্ষা পাবে। এখানে উল্লেখ্য যে, এই কোয়ারি একটি অংশ প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ)এর অন্তভূক্ত।
ভোলাগঞ্জ কোয়ারি উৎস মুখে থেকে নিয়ন্ত্রিতভাবে পাথর সরিয়ে নিলে পানির প্রবাহ ঠিক থাকবে এর শ্রমিকদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। একই বিষয় বিছনাকান্দি কোয়ারির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
মন্ত্রী আরো উল্লেখ করেন কোয়ারি সমূহকে কেন্দ্র করে সিলেটে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। কিন্তু আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে, পর্যটন কেন্দ্রের সৌন্দর্য রক্ষার পাশাপাশি মানবিক কারনে স্থানীয়দের কর্মের সংস্থান ও বঞ্চনীয়। দীর্ঘদিন কোয়ারি বন্ধ থাকায় স্থানীয়রা কর্মসংস্থান হারিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে বিধায় আইন শৃংখলাও সঠিকভাবে পালন করা দরকার। কোয়ারীর ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। যেখানে সম্ভব কোয়ারীগুলির অংশ বিশেষ পর্যটকদের জন্য সংরক্ষিত রাখা যেতে পারে। উপরোক্ত বর্ণিত বিষয়গুলির আলোকে সীমিত আকারে নির্ধারিত পদ্ধতিতে পাথর কোয়ারীর প্রবেশ মুখসমূহ উন্মুক্ত করার অন্য পাথর উত্তোলণের অনুমতি প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।