আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবোদে ব্যাপক বিক্ষোভ, ভাঙচুর এবং অগ্নি সংযোগ চলছে। এদিকে ইমরান খানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুধবার ৮ দিনের রিমান্ড আদেশ দিয়েছেন পাকিস্তানের একটি আদালত। মঙ্গলবার তাকে আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় ইসলামাবাদ হাই কোর্টের প্রাঙ্গণ থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় দেশটির আধা-সামরিক বাহিনী রেঞ্জারস।
পৃথকভাবে, একটি দায়রা আদালত তোশাখানা মামলায় পিটিআই প্রধানকে অভিযুক্ত করেছে। উভয় শুনানি ইসলামাবাদ পুলিশ লাইনে অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার গভীর রাতে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে ‘এককালীন ব্যবস্থা’ হিসেবে এটিকে আদালতের মর্যাদা দেওয়া হয়।
আল-কাদির ট্রাস্ট মামলার শুনানির সময় দুর্নীতি পর্যবেক ইমরানের ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করার জন্য আদালতকে অনুরোধ করেছিল। শুনানিতে সভাপতিত্ব করেন বিচারক মোহাম্মদ বশির।
বিক্ষোভ-অগ্নিসংযোগ: এরইমধ্যে দেশজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। একইসঙ্গে ইমরানকে গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দাও জানিয়েছে দলটি। বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা করে বুধবার দেশব্যাপী ধর্মঘট ঘোষণা করেছে পিটিআই নেতৃত্ব। একইসঙ্গে ‘ক্রমবর্ধমান ফ্যাসিবাদের’ বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসার জন্য কর্মী-সমর্থকদের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ইমরান খানের অনুমোদিত নির্ধারিত জনসভার সময়সূচী অপরিবর্তিত থাকবে বলেও পিটিআইয়ের সিনিয়র নেতৃত্ব ঘোষণা করেছেন।
এদিকে পৃথক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে রাজধানী ইসলামাবাদে বিােভ-সমাবেশ করার পরিকল্পনা করছেন তার সমর্থকরা। বিশ্বকাপজয়ী সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার গ্রেপ্তারের পর সেখানেই হেফাজতে রয়েছেন এবং এতে করে ইসলামাবাদে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে ইমরান সমর্থকদের সংঘর্ষের আশঙ্কা আরও বেড়ে গেছে।
পাকিস্তানের দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা মঙ্গলবার ইসলামাবাদ হাইকোর্ট থেকে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ জানিয়েছে, যে পুলিশ গেস্ট হাউসে তাকে রাখা হয়েছে সেখানেই আদালতের শুনানি হবে।
সংবাদমাধ্যম বলছে, ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বাইরে থেকে মঙ্গলবার পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরোর (এনএবি) ওয়ারেন্টে পাকিস্তানের আধাসামরিক বাহিনী রেঞ্জার্স তাকে গ্রেপ্তার করে।
আর এর জবাবে ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ সমগ্র পাকিস্তানে ‘শাটডাউন’ বা ধর্মঘটের ডাক দেয়। এছাড়া ইমরান খানের সমর্থকরা অনেক শহরে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং লাহোর এবং রাওয়ালপিন্ডিতে সামরিক ভবনে হামলা চালানো হয়।
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের সমর্থকদের ইসলামাবাদের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার জন্য বুধবার সকালে সোয়াবি শহরে জড়ো হতে বলা হয়েছে বলে দলটি টুইটারে লিখেছে। এছাড়া বুধবার টুইটারে শেয়ার করা বার্তায়, ইমরানের দলের নেতারা কর্মীদের বিােভ চালিয়ে যেতে নির্দেশ দেন। তবে বিক্ষোভের সময় ‘আইন হাতে তুলে না নেওয়ার’ আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
মহাসচিব গ্রেফতার: এদিকে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পর এবার তার দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) মহাসচিব আসাদ উমর গ্রেফতার করেছে দেশটির কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগ। স্থানীয় সময় বুধবার ( ১০ মে) আইএসসির প্রাঙ্গণ থেকে তাকে তুলে নেয়া হয়। খবর জিও নিউজ।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ইসলামাবাদের হাইকোর্টের বার রুম থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় সিটিডির কর্মকর্তারা। তবে পাকিস্তানের সাবেক এ অর্থমন্ত্রীকে কোন মামলায় আটক করা হয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। তাকে আটকের সময় সঙ্গে ছিলেন পিটিআইয়ের ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মাহমুদ কুরেশি, সিনেটর সাইফুল্লাহ সারওয়ার খান এবং গুলাম সারওয়ার খান। নেতাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল গ্রেফতার হওয়া ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করার জন্য আবেদন করা।
পিটিআইয়ের তিন নেতা বার রুমে ফিরে আসলেও উমরকে সঙ্গে করে নিয়ে যায় পুলিশ। তাকে আটকের ঘটনায় টুইট বার্তায় নিন্দা জানিয়েছেন তেহরিক-ই-ইনসাফের আরেক নেতা শিরিন মাজারি। দলটির নেতাদের গ্রেফতারে জন্য এখন উর্বর ভূমিতে পরিণত হয়েছে আইএসসির প্রাঙ্গণ।