৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ রাত ১২:১৩

জালিয়াতি করে আনা মশা মারার ওষুধ ‘কার্যকর’

নোঙর টিভি ডেস্ক
  • আপডেট সোমবার, আগস্ট ২৮, ২০২৩,

সিঙ্গাপুরের একটি প্রতিষ্ঠানের কথা বলে মশার লার্ভা নিধনে আমদানি করা ব্যাসিলাস থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেনসিস (বিটিআই) লার্ভা নিধনে ‘কার্যকর’। পদার্থটি পরীক্ষার পর এ ফলাফল জানিয়েছে সরকারি দুই প্রতিষ্ঠান। পরীক্ষার ফলাফল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনেও (ডিএনসিসি) পাঠানো হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটির জন্য আনা বিটিআই’র নমুনা পরীক্ষা করে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ শাখা। পরে গতকাল সংস্থা দুটি তাদের পরীক্ষার পর উত্তর সিটিকে দেয়।

ডিএনসিসিকে বিটিআই সরবরাহ করেছিল দেশিয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী চীন থেকে বিটিআই আমদানির সুযোগ ছিল না। তবে প্রতিষ্ঠানটি চীন থেকে আমদানি করলেও এটির মোড়কে সিঙ্গাপুরের নাম দিয়েছিল।

জালিয়াতি করলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করার পর মশার লার্ভা নিধনে বিটিআই কতটা কার্যকর, তা পরীক্ষা করে দেখতে এর নমুনা আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। বিটিআই বলে আনা পদার্থটি আদৌ সেটি কিনা, তা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় উদ্ভিদ সংরক্ষণ শাখায়।

রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ল্যান্ট প্যাথলজি বিভাগে বিটিআই নমুনার মান যাচাইয়ের পরীক্ষা (কোয়ালিটি টেস্ট) করে উদ্ভিদ সংরক্ষণ শাখা। এতে দেখা যায়, পরীক্ষার জন্য পাঠানো নমুনায় মশার লার্ভা নিধনের ব্যাকটেরিয়া বিটিআই পাওয়া গেছে। ঠিকাদারের সরবরাহ করা বিটিআই’র মোড়কে প্রতি মিলিগ্রামে ১ হাজার ২০০ ব্যাকটেরিয়া রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে গবেষণাগারে পরীক্ষায় এর চেয়ে বেশি (১ হাজার ৪০০ ব্যাকটেরিয়া) পাওয়া গেছে।

পরীক্ষার ফলাফলের সঙ্গে বিটিআই প্রয়োগ নিয়ে সুপারিশও করেছে উদ্ভিদ সংরক্ষণ শাখা। তাতে বলা হয়েছে, বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের অধীন মাঠ পর্যায়ে বিটিআই’র পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা প্রয়োজন।

আইইডিসিআরের মেডিকেল এন্টোমলজি বিভাগের গবেষণাগারে আমদানি করা বিটিআইয়ের কার্যকারিতা যাচাইয়ের পরীক্ষা করা হয়। আইইডিসিআর বলছে, রাজধানীর মহাখালী এলাকা থেকে সংগ্রহ করা লার্ভা দিয়ে পরীক্ষা চালায় তারা। চারবারের পরীক্ষায় তিনবারই বিটিআই প্রয়োগের ২৪ ঘণ্টা পর ৯২ শতাংশ লার্ভা মারা গেছে। এক পরীক্ষায় লার্ভা মারা গেছে ৮৮ শতাংশ।

ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, আমদানি করা বিটিআই যে অরিজিনাল (আসল) এবং শতভাগ কার্যকর, সেটি আমাদের ডিএনসিসির পরীক্ষায় নিশ্চিত করেই পরীক্ষামূলকভাবে এর প্রয়োগ শুরু করেছিলাম। উদ্ভিদ সংরক্ষণ শাখা এবং আইইডিসিআর থেকে রিপোর্ট পেয়েছি। তাদের পরীক্ষায় নিশ্চিত হলো, কীটনাশকটি বিটিআই এবং সেটি কার্যকর।

তিনি বলেন, আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে করা পরীক্ষায় এবং ডিএনসিসির মূল্যায়ন কমিটির পরীক্ষায় এটি কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছিল। ফলে আমদানি করা কীটনাশক যে বিটিআই ও এটি যে শতভাগ কার্যকর, তা সব পরীক্ষায় নিশ্চিত হলো। আমদানিকারক মোড়কে ভুল তথ্য দিয়ে প্রতারণা করেছে। এটা নিয়ে আইনি প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। কোনো দুর্নীতি ও অনিয়মকে ছাড় দেওয়া হবে না। এখন বিটিআই প্রয়োগ করা করা হবে কিনা, আলোচনা করে সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিটিআই প্রয়োগ নিয়ে কীটতত্ত্ববিদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ডেঙ্গুতে মানুষ মারা যাচ্ছে। প্রয়োগ করা গেলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বিটিআই কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখতে পারত।

জালিয়াতির প্রসঙ্গে এই কীটতত্ত্ববিদ বলেন, বিটিআই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটি যে অন্যায় করেনি, তা নয়। সিঙ্গাপুরের বেস্ট কেমিক্যাল থেকে না এনেও বলেছে সেখান থেকে আমদানি করেছে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2016 Paprhi it & Media Corporation
Developed By Paprhihost.com
ThemesBazar-Jowfhowo