গতকাল সোমবার গভীররাতে সাদা পোশাকে নিজ বাড়ি থেকে সোনার সিলেট পত্রিকার এর সিলেট জেলা প্রতিনিধি ও জেলা প্রেসক্লাবের সদস্য এবং ব্লগার মুহাম্মাদ রবিউল ইসলাম ‘কে তথ্য ও প্রযুক্তি আইনের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করেছে সিলেট সদর থানা পুলিশ। এনিয়ে সাংবাদিক সমাজে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সাংবাদিক মুহাম্মাদ রবিউল ইসলামের পিতা জানান শনিবার দিবাগত রাত ৮ টার দিকে পুলিশ পরিচয়ে কয়েকজন অস্ত্রধারী লোক তোপাযেলকে তাদের বাড়ি থেকে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে যায়। পরে তিনি থানায় গিয়ে জানতে পারেন সাইবার ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা একটি মামলায় আটক দেখানো হয়েছে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাইলে থানার ওসি কোন সদুত্তর দেননি এবং ব্যাস্ততা দেখিয়ে এড়িয়ে যান।
বিভিন্ন সময় প্রভাবশালী মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছিলেন সাংবাদিক তোফায়েল আহমেদ। সর্বশেষ সিটি মেয়রের বিরুদ্ধে ব্যাক্তিগত ব্লগে লেখালেখি করেন তোফায়েল। দীর্ঘদিন যাবত তিনি গুম-হামলা ও মামলার হুমকি পাচ্ছিলেন। এ ব্যাপারে তিনি সিলেট সদর থানাকে মৌখিকভাবে অবগতও করেছিলেন। প্রতিবেদন প্রকাশের জেরে গত ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ সালে সোনার সিলেট পত্রিকা অফিসে হামলা ও ভাঙচূড় চালায় সন্ত্রাসীরা। এসময় তারা ল্যাপটপ,সিসিটিভি ক্যামেরা সহ অফিসের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন নথিপত্র ধ্বংস করে।
গত ১৩ ই জানুয়ারি নিউজ সংগ্রহের জন্য মাদক কবলিত এলাকায় গেলে ওয়ার্ড কমিশনারের সন্ত্রাসীরা প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে তোফায়েলের উপর হামলা চালায় এবং মারাত্মক ভাবে আহত করে। সর্বশেষ ১৭ ই জানুযারী ছাত্রলীগ জেলা সভাপতির নেতৃত্বে ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা তার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এ ব্যাপারে পরিবারের লোকজন মামলা করতে গেলে সিলেট সদর থানা পুলিশ মামলা গ্রহণ না করে একটি সাধারণ ডায়েরি লিপিবদ্ধ করে এবং তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকাবাসীর অনেকেই বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন সাংবাদিক তোফায়েল আহমেদ। জেলা এবং উপজেলায় মাদকের আস্তানা ও গডফাদারদের বিরুদ্ধে তিনি তার পত্রিকা এবং ব্লগে লেখালেখি করেছিলেন। পরে পুলিশ জড়িতদের আটক করে জেলহাজতে পাঠান। এর পর থেকে তোফায়েলের জীবনে বৈরীতা সৃষ্টি হয়। আটককৃত মাদক কারবারিরা প্রভাবশালী হওয়ায় মিথ্যা সাজানো মামলায় তাকে আটক করে পুলিশ।
এ ব্যাপারে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সাংবাদিক ও ব্লগার তোফায়েল আহমেদের মুক্তি দাবী করে বিবৃতি দিয়েছে জেলা প্রেসক্লাব। অন্যদিকে, ক্ষোভে ফেটে পড়েছে সিলেটসহ সারাদেশের সাংবাদিকরা। সাংবাদিক তোফায়েলের মুক্তি এবং মিথ্যা মামলা দ্রুত প্রত্যাহারের দাবীতে সারাদেশে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচীর হুশিয়ারি দিয়েছে সিলেট রিপোর্টার্স ইউনিটি ও প্রেসক্লাব সহ সকল সাংবাদিক সংগঠনগুলো।
এ বিষয়ে সিলেট সদর থানার ওসি সহিদুর রহমান বলেন, “সাংবাদিক তোফায়েলের সাথে আমার এবং আমাদের ব্যক্তিগত কোন শত্রুতা নেই। তার বিরুদ্ধে তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে একটি অভিযোগ আসলে তদন্ত করে সেটার সত্যতা পাওয়া যায়। ফলে তাকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।”