১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ বিকাল ৫:৩৬

কবি করামত আলীর ইন্তেকাল বার্ষিকী

কামরুল আলম
  • আপডেট শনিবার, জানুয়ারি ২৭, ২০২৪,

২০০২ সালের ২৭ জানুয়ারি (২৬ জানুয়ারি দিনগত রাত তিন ঘটিকায়) পৃথিবীতে সফরকালের সমাপ্তি ঘটে আমার আব্বা কবি করামত আলীর।
যে দেশ থেকে এসেছিলেন সে দেশেই ফিরে যান তিনি। অনেকেই বলেন, না ফেরার দেশে চলে গেছেন। আমি বলি ফেরার দেশেই ফিরে গেছেন। আমিও যাব, এমনকি আমরা সকলেই যাব। সবাইকেই ফিরে যেতে হবে সেই দেশে, যে দেশে ফিরে গেছেন আমার আব্বা।
তখন ফেসবুক ছিল না। এমনকি মোবাইল ফোনেরও একেবারে প্রারম্ভিক যুগ তখন। সবার হাতে হাতে ছিল না। আব্বার মৃত্যু সংবাদ বাইসাইকেল চালিয়ে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছি।
একটি সংবাদ লিখে একজনকে দিয়েছিলাম পত্রিকায় পৌঁছানোর জন্য। পরদিন সিলেটের ডাক, জালালাবাদ ও সিলেট বাণীতে যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে ছাপা হয়েছিল। আব্বা এ পত্রিকাগুলোর নিয়মিত লেখক ছিলেন। বিশেষ করে জালালাবাদ ও সিলেট বাণীতে তাঁর অনেক প্রিয়জন ছিলেন। তিনি জালালাবাদে লিখতেন ‘নয়ান খাঁর বয়ান’ শিরোনামে। সিলেট বাণীতে ‘কলম আলীর কলকলামী’ ও ‘কামরাঙ্গার চাটনী’ শিরোনামের কলাম ছাপা হত তাঁর। সেই সময় (১৯৯৫-২০০০) এই কলামগুলো সিলেট অঞ্চলে বেশ পাঠকপ্রিয় ছিল।
আব্বা জকিগঞ্জের গুরুসদয় হাইস্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন। পরবর্তী সময়ে জোবেদ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়েরও প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন। লুৎফুর রহমান উচ্চবিদ্যালয়েরও প্রথম প্রধান শিক্ষক তিনি। এছাড়াও বহু স্কুল ও মাদরাসায় শিক্ষকতা করেছেন। বেসরকারি সংস্থা ‘সীমান্তিক’-এর প্রতিষ্ঠাকালীন প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন আব্বা।
কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ-এর সাপ্তাহিক সাহিত্য আসরগুলোতে নিয়মিত উপস্থিত থাকতেন। অনেক সাহিত্যআসরে সভাপতিত্ব করেছেন। তখনও লেখালিখি শুরু করিনি আমি। তবে আব্বার সাথে কেমুসাস সাহিত্য আসরে যেতাম। বসে থাকতাম চুপটি করে ঘাপটি মেরে। শুনতাম গুরুগম্ভীর আলোচনা। প্রথম প্রথম বিরক্তি এলেও পরে ভালো লাগতে শুরু করে। একসময় আমিও লিখতে শুরু করি। ১৯৯৭ সালে আমার লেখা প্রথম প্রকাশ হয় জাতীয় দৈনিক ইনকিলাবে। আব্বা খুব খুশি হন। উৎসাহ দেন। এসময় সিলেট বাণীতে পিতা-পুত্রের লেখা একই সঙ্গে ছাপা হত। ভালো লাগত।
২০০১ সালে আমি ছোটোদের ছোটোকাগজ ‘কচি’ বের করি। আব্বার কবিতা কচিতেও ছাপ হয়েছে। কচিতে আব্বাকে একটি সম্মানজনক পদ দিতে চেয়েছিলাম। প্রধান উপদেষ্টার পদ দিতে চেয়েছিলাম। আব্বা কী মনে করবেন, এই ভেবে প্রিন্টার্স লাইনে তাঁর নামটি বসানো বাকি থেকে যায়। তাঁকে জানিয়ে, তাঁর অনুমতি নিয়ে নাম বসাব, ভেবেছিলাম। তিনি এরইমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। গুরুতর অসুস্থ। ঢাকা ও সিলেটের হাসপাতালের বেডে আব্বার সঙ্গে আমিই ছিলাম সার্বক্ষণিক সঙ্গী। দিনগুলো দ্রুতই ফুরিয়ে গেল। ঢাকাস্থ বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সর্বশেষ চিকিৎসা চলছিল তাঁর। হাসপাতাল থেকে জানানো হলো, সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। বাড়িতে নিয়ে যান। আমরা সিলেট রওয়ানা হলাম। আব্বা তখন কথা বলতে পারতেন না। হাসপাতাল থেকে যখন বের হচ্ছি, আব্বার চোখে তখন অশ্রু দেখতে পেলাম। তিনি টের পেয়ে গেছেন, বুঝতে বাকি রইল না।
২০০২ সালের জানুয়ারি মাস। তারিখ মনে নেই। ৭/৮ জানুয়ারি হবে। আব্বাকে নিয়ে সিলেট শহরের বাসায় চলে এলাম। তারপর…। ২৬ জানুয়ারি রাত তিনটার দিকেই চলে গেলেন আব্বা।
২৭ জানুয়ারি তাঁর প্রথম নামাজে জানাজা সিলেট শহরে সম্পন্ন করে চলে গেলাম গ্রামের বাড়িতে। ইছামতি আলিয়া মাদরাসার ময়দানে জানাযা হলো উপমহাদেশের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা হবিবুর রহমানের ইমামতিত্বে।
২২টি বছর পেরিয়ে এসেছি। আব্বাকে প্রায়ই স্বপ্নে দেখি। আর দেখি কল্পনায়। আশা করি তিনি ভালো আছেন। খুব খুব ভালো আছেন। রাব্বে করিম তাঁকে ভালো রাখুন, এটাই প্রার্থনা।

ছবি:
৯ নভেম্বর ১৯৯৫ তারিখে কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের ৫০তম সাহিত্য আসরে কবিতা পাঠ করছেন কবি করামত আলী। কেমুসাসের তখনকার সাধারণ সম্পাদক কবি রাগিব হোসেন চৌধুরীকে দেখা যাচ্ছে মঞ্চে বসে আছেন। ফটোগ্রাফার পুরো মঞ্চ ধরাতে না পারায় বাকিদের কথা স্মরণে আনতে পারছি না। আজিজুল হক মানিক ও সেলিম আউয়ালের কথা মনে আছে। কেমুসাস সাহিত্য আসরগুলোতে তাঁরা সক্রিয় থাকতেন তখন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2016 Paprhi it & Media Corporation
Developed By Paprhihost.com
ThemesBazar-Jowfhowo