১৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ দুপুর ২:৪১

না বুঝে ভিজিট ভিসায় কানাডায় পাড়ি জমানো বাংলাদেশিরা এখন অসহায়

সোনার সিলেট ডটকম
  • আপডেট বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪,

ভিজিট ভিসা বেশ সহজ করার ফলে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে লাখো ভ্রমণপ্রত্যাশী বছরখানেক ধরে কানাডা আসছেন। ভিজিট ভিসা আরও লোভনীয় করার জন্য  কানাডা সরকার ঘোষণা দিয়েছিল যাঁরা এলএমআইএ (লেবার মার্কেট ইম্প্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট) অ্যাপ্রুভড চাকরি খুঁজে পাবেন, তাঁরা কানাডায় এসে অস্থায়ীভাবে কাজ করতে পারবেন। এলএমআইএ অ্যাপ্রুভড চাকরি হচ্ছে কানাডার মধ্য থেকে যাঁদের কাজ করার অনুমতি আছে তাঁদের মধ্যে সেই কাজের জন্য কাউকে যদি খুঁজে না পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে ভিজিট ভিসায় এসে বা বিদেশিরা কাজ করতে পারবেন।

যদিও কানাডায় বর্তমানে মোট জনসংখ্যার ৬ দশমিক ১ ভাগ লোক বেকার কিন্তু তারপরও সরকার এই সুযোগটি দিয়েছিল। অনেকেই মনে করেন কোভিড এবং ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলা করার জন্য কানাডা বিদেশিদের ভ্রমণে এনে তাঁদের অর্থনীতিকে চাঙা করার চেষ্টা করেছে। নিজস্ব অর্থনীতিকে চাঙা করার সিদ্ধান্তে অনেকেই না বুঝে কানাডায় এসে এখন বিপদে পড়েছেন। সেই সঙ্গে লাখো লোক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসার ফলে কানাডার আবাসন শিল্প একটি বড় ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে। কানাডায় এত মানুষের থাকার জায়গা পর্যন্ত নেই।

যারা কানাডায় এসে একবার ঢুকেছেন তাদের অধিকাংশই রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। কানাডায় যদি কেউ জীবনের হুমকির কথা বলে কেউ রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন, তবে কানাডা তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়। রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থীরা কানাডায় প্রটেকটিভ পারসন হিসেবে মর্যাদা পায় এবং কোনো কাজ খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত কম বেশি ৭০০ ডলার করে প্রতি মাসে সরকারের কাছ থেকে ভাতা পায়। তারা কাজ খুঁজে পেলে সেই ভাতা আর থাকে না নিজের আয়ের টাকা দিয়ে চলতে হয়।

অন্যদিকে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ হলে তাঁদের প্রমাণ করতে হয় যে নিজ দেশে তাঁর জীবন হুমকির সম্মুখীন। রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে হয় ইমিগ্রেশন ল ইয়ার। আর কেসে যদি সে হেরে যায় তাহলে তাকে কানাডা থেকে বের করে দেওয়া হয়।

এসব ভিজিট ভিসায় আসা লোকজন যখন কানাডায় ভিজিট ভিসার জন্য অ্যাপ্লিকেশন করে তখন তাঁদের নিজ দেশে ভাল চাকরি বা ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাংকে অনেক টাকা, কান্ট্রি টাই, ফ্যামিলি টাই, ভাল ট্রাভেল হিস্ট্রি ইত্যাদি দেখায়। কানাডায় আসার আগে এক ধরনের ডকুমেন্ট দিয়ে ভিসা নেওয়া এবং আসার পরে অন্য কথা বলে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার ফলে অনেকেরই এই রাজনৈতিক আশ্রয়ের মামলায় হেরে যাবেন।  শেষ পর্যন্ত তাঁদের দেশ থেকে বের করে দেওয়া হবে।

এই মামলা চালাতে গিয়ে অনেকেই হিমশিম খাচ্ছেন ও নিজ দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে টাকা হুন্ডি করে কানাডায় নিয়ে আসছে। ভিজিট ভিসায় কানাডায় এসে এলএমআইএ অ্যাপ্রুভড চাকরি না পেয়ে অনেক বাংলাদেশি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করে এখন বিপাকে পড়েছে। তাঁদের অনেকেরই ইংরেজি ভাষায় যোগ্যতা, কানাডার কাজের সঙ্গে তাঁদের অতীত জীবনের কাজের অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকার ফলে হাজারো বাংলাদেশি কোনো কাজ খুঁজে পাচ্ছেন না।

অন্যদিকে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করার ফলে সরকারের কাছে পাসপোর্ট জমা দিতে হয়েছে ফলে তাঁরা দেশেও ফিরে যেতে পারছেন না।

ভিজিট ভিসা করার সময় তারা একেকজন ৫ থেকে ১৫ লাখ বাংলাদেশি টাকা খরচ করে এসেছেন, কারণ, কানাডার ভিসা হচ্ছে ডকুমেন্ট বেসড। ফিন্যান্সিয়ালসহ বিভিন্ন ডকুমেন্ট অসাধু চক্রগুলো তাদের বানিয়ে দিয়ে এই টাকাগুলো হাতিয়ে নিয়েছে।

অন্যদিকে কানাডায় আসার পর যখন তাঁরা যখন রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করছেন, তখন আইনজীবীদের কমপক্ষে ৭ থেকে ১০ হাজার কানাডিয়ান ডলার দিতে হচ্ছে। কাজ না পাওয়া, থাকা খাওয়ার অত্যাধিক ব্যয়, আইনজীবীদের খরচের ফলে এ ধরনের লোকজন মানবেতর  জীবনযাপন করছেন। ফুড ব্যাংক থেকে কোনো রকম খাদ্য সহযোগিতা নিয়ে বেঁচে আছেন তাঁরা।

কানাডার ফুড ব্যাংকে সরকারের কোন সাহায্য–সহযোগিতা থাকে না, স্থানীয় লোকজনের দানের টাকায় এ ফুড ব্যাংকগুলো চলে। অন্যদিকে কয়েকগুণ মানুষের ভিড় বেড়ে যাওয়ায় ফুড ব্যাংকগুলো আগের চেয়ে খাওয়া অনেক কমিয়ে দিয়েছে।

কানাডার টরেন্টোর ড্যানফোর্থ এলাকা যা এখন বাংলাটাউন নামে পরিচিত, সেখানে সকাল–বিকেল-সন্ধ্যা এ ধরনের হাজারো রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থীদের কলরবে মুখর, যাঁরা কোনো কাজ না পেয়ে উদ্দেশ্যবিহীনভাবে ঘুরছেন।

ইদানীং আবার দেখা গেছে কানাডায় প্রবেশ করার আগেই বিভিন্ন বিমানবন্দর থেকে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে কানাডা বিমানবন্দরে নামার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের ডকুমেন্টগুলো আবার চেক করা হয়। যারা ভুয়া ইনভাইটেশন লেটার ও ভুয়া ডকুমেন্ট নিয়ে কানাডায় এসেছেন, তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে কানাডা থেকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ অসহায় মানুষগুলোর অসাহত্বের সুযোগ দিয়ে কানাডার ভেতর থেকে একটি অসাধুচক্র তাঁদের  আমেরিকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করছে, মন্ট্রিয়ালের বিভিন্ন অরক্ষিত বর্ডার থেকে।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, আমেরিকা যেতে গিয়ে অনেকেই এখন আমেরিকার জেলখানায় আটক রয়েছেন। অভিজ্ঞ মহলের পরামর্শ হচ্ছে, এভাবে যদি কানাডায় না বুঝে লোকজন আসে, তাহলে তাদের সর্বস্ব খোয়াতে হবে এবং নিঃস্ব হয়ে অধিকাংশ মানুষকেই কানাডায় হাজার হাজার ডলার খরচ করে কয়েক বছরের মধ্যে ফিরে যেতে হবে। কারও প্ররোচনায় না পড়ে বুঝেশুনে ভিজিট ভিসায় কানাডায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2016 Paprhi it & Media Corporation
Developed By Paprhihost.com
ThemesBazar-Jowfhowo