২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ সকাল ৯:৩৯

ভুয়া রিকশায় নগর সয়লাব

এ টি এম তুরাব
  • আপডেট বুধবার, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২১,

যাত্রী পরিবহনের জন্য নেই কোনো নিবন্ধন। এরপরও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হাজার হাজার অবৈধ রিকশা। ট্রাফিক পুলিশের চোখের সামনে জাল, ভুয়া ও সংগঠনের নাম্বার প্লেট দিয়ে নগরীর পাড়া-মহল্লা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে নামানো হয়েছে রিকশা। এক দশক ধরে সিটি করপোরেশনের নিবন্ধন বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন সংগঠন তাদের বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে হাজার হাজার অবৈধ রিকশার নম্বরপ্লেট দিচ্ছে।

শুধু তাই নয়, এসব অবৈধ রিকশা ও ভ্যান গাড়ীর গ্যারেজের কোনো ট্রেড লাইসেন্সও নেই। গ্যারেজ গুলোতে চলছে মদ-জুয়ার আড্ডা। আবার মেয়রের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে নকল লাইসেন্স তৈরী হচ্ছে দেদারছে। এই বাণিজ্য চালিয়ে কথিত শ্রমিক নেতারা লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক হচ্ছেন। বৈধ রিকশা ও ভ্যান গাড়ীর ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, অবৈধ রিকশা ও ভ্যান গাড়ীর কারণে এই পেশার সাথে সংশ্লিষ্টরা চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। পাশাপাশি সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। এতে দেখার যেনও কেউ নেই। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের হিসেব মতে, ১৩ হাজার ১৬৭টি নিবন্ধিত রিকশা থাকলেও বেসরকারী একটি সংস্থার হিসেব বলছে, নগরীতে অর্ধলক্ষাধিক অবৈধ রিকশা আছে। তবে রিকশা, ভ্যান মালিক ঐক্য পরিষদ বলছে, সিলেটে প্রায় ২৬ হাজারের মতো রিকশা চলাচল করছে। অবৈধ রিকশা ও ভ্যান গাড়ীর বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে কোনো অভিযান কারও চোখে পড়েনি। এদিকে বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে নগরীতে এখনো ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলও অব্যাহত রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিটি করপোরেশন সর্বশেষ কিছু রিকশা-ভ্যানের লাইসেন্স দিয়েছে ২০০৯ সালে। এরপর ১১ বছর থেকে প্যাডেলচালিত রিকশার লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ রয়েছে। এই সুযোগে অবৈধভাবে টাকা নিয়ে রিকশার লাইসেন্স বা নম্বরপ্লেট দিচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন। রিকশা-ভ্যানের মালিকরা জানান, সংগঠন থেকে নম্বরপ্লেট না নিয়ে রিকশা রাস্তায় নামানো অসম্ভব। এমনকি চুরি হওয়া রিকশাও ফিরে পাওয়া যায় না। বেশ কয়েকটি সংগঠন থেকে এসব রিকশা-ভ্যানকে রাস্তায় চলাচলের জন্য অবৈধ নাম্বার প্লেট দেওয়া হয়। নম্বরপ্লেটকে-ই এসব সংগঠনের ভাষায় বলা হয় ‘পরিচয়পত্র’। সিরিয়াল নম্বরও থাকে এ প্লেটে। সংগঠন তৈরী করে রিকশা-ভ্যানের লাইসেন্স (নম্বরপ্লেট) দেওয়ার নামে মালিকদের কাছ থেকে রীতিমতো চাঁদাবাজি করা হচ্ছে।

সিসিক সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৪ সালে তৎকালীন পৌরসভা কর্তৃপক্ষ নগরে ১০ হাজার ২০৪টি রিকশা চলাচলের অনুমতি দেয়। এর মধ্যে শুধু সিলেট সিটি কর্পোরেশনের অধীন রিকশার সংখ্যা ৪ হাজারের মতো। বর্তমানে ১৩ হাজার ১৬৭টি প্যাডেলচালিত রিকশা নিবন্ধিত আছে। বাকি রিকশা বিভিন্ন ইউনিয়নের আওতাভুক্ত।

২০০৯ সাল থেকে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নতুন করে কোনো রিকশার নিবন্ধন দিচ্ছে না। তবে যেসব রিকশা নিবন্ধিত আছে সেগুলো প্রতিবছর নবায়ন করতে হয়। এ নবায়ন ফি বাবত প্রতিবছর ভ্যাটসহ খরচ হয় ২১৩ টাকা। সেই অর্থে প্রতিবছর সিলেট সিটি কর্পোরেশন রিকশা নবায়ন ফি বাবত রাজস্ব পায় ২৮ লাখ ৪ হাজার ৫৭১ টাকা। তবে সিসিক বলছে, প্রতিবছর নবায়ন করেন ৬ থেকে ৭ হাজার রিকশা। চলতি বছর করোনাভাইরাসের কারণে রিকশার নবায়ন কিছুটা কম হয়েছে। তবে এখনও যেহেতু বছর শেষ হয়নি সেজন্য নবায়নকৃত রিকশার সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রিকশার নতুন লাইসেন্স দেয়া বন্ধ থাকার সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে কিছু নাম সর্বস্ব সমিতি ও সংগঠন। কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০টি সংগঠনের পক্ষ থেকে এসব অবৈধ লাইসেন্স দেয়া হয়। তারা রিকশার নম্বর প্লেট দিচ্ছে। এক একটি নম্বর প্লেটের বিপরীতে রিকশা প্রতি ৩ মাস পরপর আদায় করা হচ্ছে ২০০ থেকে ৩শ’ টাকা। আর প্লেটের কথা বলে নেয়া হচ্ছে ৫-১০ হাজার টাকা। সরকারীভাবে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার সুযোগে অবৈধভাবে রিকশার প্লেট নিয়ে জমজমাট বাণিজ্য চলছে। বেশ কয়েকটি চক্র অবৈধ নাম্বার প্লেট বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, অবৈধভাবে নম্বর প্লেট দেওয়া সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে, সিলেট জেলা রিকশা মালিক শ্রমিক ইউনিয়ন, জেলা শ্রমিক ইউনিয়ন, মহানগর রিকশা মালিক, রিকশা-ভ্যান মালিক সমিতি, শাহজালাল পরিবহন, পশ্চিম তেরারতন পরিবহন, বহুমুখী সমবায় সমিতি, মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ, ফেডারেশনসহ আরো অনেক বেনামি সংগঠন। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

এসব সংগঠনের নেতারা রিকশায় চাঁদাবাজি করে মূলত নম্বরপ্লেট বিক্রি করে-যেটি বিশেষ মহলের যোগসাজশে রিকশার চলাচলের অনুমোদন নিশ্চিত করে। রিকশার পেছনে লাগানোর জন্য দেওয়া এসব নম্বরপ্লেট ৩ মাস ও ৬ মাস মেয়াদী। ৩ মাস মেয়াদী নম্বর প্লেটের জন্য নেওয়া হয় ৫০-১৫০ টাকা। ৬ মাস মেয়াদী নম্বরপ্লেটের জন্য ২০০-৩০০ টাকা।

এ বিষয়ে সিলেট সিটি করর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী জালালাবাদকে বলেন, রিকশার কারণে নগরীতে যানজট বাড়ায় ২০০৯ থেকে লাইসেন্স বন্ধ রাখা হয়েছে। এরপর বিভিন্ন সংগঠনের নামে লাইসেন্স দেওয়ার আবেদন করা হয়। কিন্তু সিটি করপোরেশন নতুন কোনও লাইসেন্স দেয়নি।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় অবৈধ রিকশার বিরুদ্ধে নগরীতে অভিযান পরিচালনা করা হলে এসব সমিতি আদালতে রিট করে। আদালত স্থিতাবস্থার আদেশ দিলেও সংশ্লিষ্ট সমিতি ও সংগঠনগুলো রিটের দোহাই দিয়ে নতুন করে আরো রিকশার নাম্বার প্লেট দেওয়া শুরু করে। তাদের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।

জালালাবাদ-এর সৌজন্যে

 

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2016 Paprhi it & Media Corporation
Developed By Paprhihost.com
ThemesBazar-Jowfhowo