২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ দুপুর ১:৩১

উপহারের ঘর কিছু মানুষ হাতুড়ি-শাবল দিয়ে ভেঙে মিডিয়ায় ছবি দিচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

সোনার সিলেট ডেস্ক
  • আপডেট বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২১,

মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘর কিছু মানুষ হাতুড়ি ও শাবল দিয়ে ভেঙে তা গণমাধ্যমে প্রচার করছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যারা এই ঘরগুলো ভেঙেছে, তাদের নামের তালিকা তাঁর কাছে রয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবনে তাঁর সভাপতিত্বে দীর্ঘ প্রায় এক বছর পর আওয়ামী লীগের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে শুরুতে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনী বক্তৃতা করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য রেকর্ড করে এবং এর একটা ক্লিপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রচারের জন্য দেয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যখন সিদ্ধান্ত নিলাম প্রত্যেকটা মানুষকে আমরা ঘর করে দেব, আমাদের দেশের কিছু মানুষ এত জঘন্য চরিত্রের, আমি কয়েকটা জায়গায় হঠাৎ দেখলাম যে ঘর ভেঙে পড়ছে। ভাঙা ছবি দেখার পরে পুরো জরিপ করালাম কোথায় কী হচ্ছে। সেখানে আমরা দেড় লাখের মতো ঘর তৈরি করে দিয়েছি। ৩০০টা ঘর বিভিন্ন এলাকায় কিছু মানুষ নিজে থেকে গিয়ে হাতুড়ি, শাবল দিয়ে সেগুলো ভেঙে ভেঙে তারপর মিডিয়ায় সেগুলোর ছবি তুলে দিচ্ছে। তাদের নামধাম তদন্ত করে বের করা হয়ে গেছে। আমার কাছে পুরো রিপোর্ট আছে। গরিবের ঘর তারা যে এভাবে ভাঙতে পারে, সেই ছবিগুলো দেখলে বোঝা যায়।

তদন্তে নয়টি জায়গায় দুর্নীতি পাওয়া গেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এক জায়গায় ৬০০ ঘর। সেখানে হয়তো তিন–চারটা ঘর, ওই যে প্রবল বৃষ্টি হলো, ওই জন্য মাটি ধসে কয়েকটা ঘর নষ্ট হয়েছে। মাত্র নয়টি জায়গায় আমরা পেয়েছিলাম, যেখানে কিছুটা দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।’

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে ঘর নির্মাণে সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দেখেছি যে প্রত্যেকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে। আমাদের ইউএনও-ডিসি সমস্ত কর্মচারী ছিল। তারা কিন্তু অনেকে এগিয়ে এসেছে এই ঘরগুলো তৈরিতে সহযোগিতা করার জন্য। যারা ইট তৈরি করে, তারাও এগিয়ে এসেছে। অল্প পয়সায় তারা ইট দিয়ে দিয়েছে। এভাবে সবার সহযোগিতা, আন্তরিকতাটাই বেশি। কিন্তু এর মধ্যে দুষ্টু বুদ্ধির কিছু, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে কষ্টকর। যখন এটা গরিবের ঘর, সেখানে হাত দেয় কীভাবে?’

নেতা-কর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের আরও সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যা–ই হোক, আমরা সেগুলো মোকাবিলা করেছি। তবে আমাদের নেতা-কর্মীদের এ ব্যাপারে আরও সতর্ক থাকা দরকার। আমাদের নেতা-কর্মীরা সরেজমিনে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে আমাকে ছবি পাঠাচ্ছে। আমি সেটা দেখছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, নির্বাচনও সামনে। সংগঠনটাও করতে হবে। এবারের করোনাভাইরাসের সময় দলের লোকেরা এবং সকল সহযোগী সংগঠন যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, আর কোনো রাজনৈতিক দলকে এভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখেনি। তাদের কোনো আগ্রহও ছিল না। প্রতিদিন টেলিভিশনে বক্তৃতা ও বিবৃতি দেওয়া, আর প্রতিটি ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে একটু সমালোচনা করা ছাড়া। তাদের একটাই কাজ ছিল—আমাদের দোষারোপ করা। এটা ছাড়া আর কোনো কাজ মানুষের জন্য তারা করেনি বোধ হয়।’

করোনার মোকাবিলায় সরকারের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘কখনো একটা সরকারের পক্ষে একা এই ধরনের পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব না। আমাদের পক্ষে এটা সম্ভব হয়েছে, তৃণমূল পর্যন্ত একটা শক্তিশালী সংগঠন থাকায়। এটা আমার বিশ্বাস। জানি এই কথা হয়তো অন্য কেউ লিখবেও না, বলবেও না। আমি শুধু বলব, এককভাবে শুধু সরকারি লোক দিয়ে সবকিছু সম্ভব হয় না।

টিকা কর্মসূচির বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘টিকা কেনার জন্য সরকার সবার আগে উদ্যোগ নিয়েছে। ভারতে একটা সময় ব্যাপকভাবে করোনা সংক্রমণ শুরু হলো, তা তারা আমাদের সরবরাহ করতে পারল না। তারপর আমরা যেখান থেকে যেভাবে পারি টিকা সংগ্রহ করি। এখন আর সমস্যা হবে না। আমরা নিয়মিত টিকা পাব। মানুষকে টিকা দিতে পারব।’

করোনার সময় মানুষকে আর্থিক সহায়তা প্রদানে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেন। বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলে দেশের উন্নতি হচ্ছে। আমরা সরকারে আছি বলেই করোনা মোকাবিলা সম্ভব হয়েছে, মানুষ সেবা পাচ্ছে। যারা সমালোচনা করে, তাদের বলব, ৭৫–এর পর থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত দেশের কী অবস্থা ছিল, সেটা যেন তারা একটু উপলব্ধি করে। তবে কিছু ভাড়াটিয়া লোক তো আছেই, সারাক্ষণ একটা মাইক লাগিয়ে বলতেই থাকবে। যে যা ইচ্ছে বলুক, আমাদের আত্মবিশ্বাস আছে। সেই বিশ্বাস নিয়ে চলি। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ইশতেহারে যে ঘোষণা করেছিলাম, সেটা করতে পেরেছি। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মহামারির কারণে আমাদের সাংগঠনিক সম্পাদকেরা সেভাবে কাজ করতে পারেনি। তারপরও আমি আটটি গ্রুপ করে দিয়েছিলাম, তারা কাজ করেছে। আমরা কিছু সাংগঠনিক তথ্য নেব। তা ছাড়া দীর্ঘদিন পরে বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আপনাদের কথা কিছু শুনব।’

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2016 Paprhi it & Media Corporation
Developed By Paprhihost.com
ThemesBazar-Jowfhowo