২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ দুপুর ২:৪৮

সিলেটের ১০৫ ইউপি’তে নির্বাচনী তোড়জোড় শুরু

সোনার সিলেট ডেস্ক
  • আপডেট শনিবার, অক্টোবর ২, ২০২১,

সিলেটে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। নড়েচড়ে উঠেছেন সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা। বিলবোর্ড, পোস্টার দেখা যাচ্ছে নানা স্থানে। চলছে ছোট-বড় সভা সমাবেশ। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীকে অংশ নিলেও সরাসরি দলীয় প্রতীকে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি। তবে, বিএনপি ঘরাণার প্রার্থীরা স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে মাঠে রয়েছেন। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নৌকার টিকেট পেতে এখন উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের মন জয় করতে ব্যস্ত।
এবার ধানের শীষ প্রতীক না থাকায় সিলেট জেলার ১০৫ ইউনিয়নে এ সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাতে চায় আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে দলের দায়িত্বশীল নেতারা ছক আঁকতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে জেলা নেতাদের সমন্বয়ে ১৩ উপজেলা সাংগঠনিক টিম গঠনসহ নির্ধারণ করা হয়েছে কর্ম-কৌশল। বিগত ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর ভরাডুবির কারণ চিহ্নিতকরণ এবং এবারের নির্বাচনে অপেক্ষাকৃত জনপ্রিয় ও যোগ্য ব্যক্তিদের মনোনয়ন দিতে কেন্দ্রে সুপারিশ করবে জেলা আওয়ামী লীগ। যাতে দলীয় প্রার্থীদের নিরঙ্কুশ বিজয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়ে উঠে। একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মো. নাসির উদ্দিন খান বলেন, দলের ত্যাগী ও যোগ্য নেতারা নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হবেন। এবার দল সংগঠিত হওয়ায় আমরা নিরঙ্কুশ বিজয় আশা করছি। তিনি বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রার্থী বেশি হওয়াতে আমরা ক্রমানুসার ঠিক করতে হয়ত গোপন মতামত নিতে পারি।

ইউপি নির্বাচনের পরপরই জানুয়ারিতে সিলেট জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইউপি’র নির্বাচিত চেয়ারম্যান-মেম্বাররাই হলেন জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটার। বিষয়টি মাথায় রেখে পুরোপুরি ঐক্যমতের ভিত্তিতে নির্বাচনী প্রক্রিয়া হ্যান্ডেল করছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলহাজ শফিকুর রহমান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মো. নাসির উদ্দিন খান। এ দু’নেতা আশাবাদি, তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে এবার ইউপি নির্বাচনে তাঁরা বড় ধরণের সফলতা দেখাতে পারবেন। এলক্ষ্যে ইতোমধ্যে কাজও শুরু হয়েছে।

গত বুধবার ইলেকশন কমিশন দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের তফশীল ঘোষণা করে। সে অনুযায়ী আগামী ১১ নভেম্বর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে সিলেট সদর উপজেলার ৮ ইউনিয়নের মধ্যে ৪টি- হাটখোলা, জালালাবাদ, কান্দিগাও এবং মোগলাগাও ইউনিয়ন, বালাগঞ্জ উপজেলার ৬টির সবক’টিতে অর্থাৎ পূর্বপৈলনপুর, বোয়ালজুড়, দেওয়ানবাজার, পশ্চিম গৌরিপুর, বালাগঞ্জ ও পূর্বগৌরিপুর ইউনিয়ন এবং কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ৬টির মধ্যে ৫টি- ইসলামপুর পূর্ব, তেলিখাল, ইছাকলস, উত্তর রনিখাই ও দক্ষিণ রনিখাই ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
২০১৬ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বালাগঞ্জের ৬ ইউপি’র মধ্যে ৪টিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী এবং দু’টিতে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী বিজয়ী হন। স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দলীয় কোন্দলের কারণে আওয়ামী লীগের এ দু’টি ইউনিয়ন হাতছাড়া হয়েছে। এবার আওয়ামী লীগ যদি সঠিক প্রার্থী নির্ধারণ করে তাহলে হারানো এ দু’ইউনিয়নও পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে বিষয়টি জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ গুরুত্বের সাথে দেখছে বলে জানা গেছে।
একইভাবে, সিলেট সদর উপজেলার ৮ ইউনিয়নের মধ্যে ৫টিতে নৌকা, ২টিতে ধানের শীষ ও একটিতে বিএনপি’র বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হন। তবে, আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ৪ ইউনিয়নের মধ্যে বিগত নির্বাচনে ৩ জন নৌকা ও একজন ধানের শীষ নিয়ে জয়ী হয়েছিলেন। এবার হাতছাড়া হওয়া হাটখোলা ইউনিয়নেও নৌকার বিজয় চায় আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ৬ ইউনিয়নের মধ্যে বিগত নির্বাচনে মাত্র একটিতে নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হন। অপর ৫ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে ধরাশায়ী হয় নৌকা। এবার এ থেকে উত্তরণ পেতে চায় আওয়ামী লীগ। নবগঠিত জেলার সাংগঠনিক টিম খুব শক্তভাবে বিষয়টি পরখ করছে। তারা সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাথে আলোচনা করে হারানো ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে কৌশলে অগ্রসর হচ্ছেন বলে জানা গেছে।
১১ নভেম্বর সিলেটের যে ১৫ ইউনিয়নে নির্বাচন হবে এরমধ্যে বিগত নির্বাচনে ৮টিতে নৌকা, ৩টিতে বিএনপি, ৩টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও একটিতে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হয়েছিলেন।
এদিকে, তফশীল ঘোষণার পর গতকাল শুক্রবার সিলেট সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের লক্ষ্যে বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। আজ শনিবার জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ব নির্ধারিত বর্ধিত সভা হবে। ওই সভায় ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইসহ নৌকার বিজয়ে ‘নেতাদের ভূমিকা’ এবং অন্যান্য বিষয়ে চুলচেরা আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। ওইদিন বিকেলে দলীয় প্রার্থী যাচাই-বাছাই করতে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে।
জানা যায়, গতকাল শুক্রবার সিলেট সদর উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে সম্ভাব্য প্রার্থী যাচাই-বাছাইয়ের প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন করেছে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ। এ পর্যায়ে প্রথমে প্রস্তাব-সমর্থনের মাধ্যমে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। এরপর উপস্থিত সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড আওয়ামী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গোপন মতামত প্রদান করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফলাফল জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ। এবার ইউপি নির্বাচনে আমরা ভালো রেজাল্ট করব। এজন্য জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক টিম কাজ করছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিলেট সদরে নৌকার সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা দেখতে গোপন মতামত নেওয়া হয়েছে। এটি নৌকার টিকেট পাওয়ার চূড়ান্ত কোনো পন্থা নয়।
শফিকুর রহমান চৌধুরী আরো বলেন, ইউপি নির্বাচনে যে বিজয়ী হতে পারবে তাকেই মনোনয়ন দিতে জেলা আওয়ামী লীগ সুপারিশ করবে। এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিবে কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড।
সূত্রমতে, সিলেটের ১৩ উপজেলায় মোট ১০৫টি ইউনিয়ন রয়েছে। এরমধ্যে সিলেট সদর উপজেলায় ৮টি, বালাগঞ্জে ৬টি, কোম্পানীগঞ্জে ৬টি, কানাইঘাটে ৯টি, গোয়াইনঘাটে ৯টি, জকিগঞ্জে ৯টি, ওসমানীনগরে ৮টি, ফেঞ্চুগঞ্জে ৫টি, বিয়ানীবাজার ১০টি, গোলাপগঞ্জে ১১টি, জৈন্তা ৬টি, দক্ষিণ সুরমা ১০টি ও বিশ্বনাথ উপজেলায় ৮টি ইউনিয়ন রয়েছে। এরমধ্যে দ্বিতীয় ধাপে সিলেটে মাত্র ১৫টি ইউপি’তে নির্বাচন হবে। আগামী ৬ অক্টোবর তৃতীয় ধাপের তফশীল ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে। ২০১৬ সালের মতো এবারও পর্যায়ক্রমে পঞ্চমধাপ পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2016 Paprhi it & Media Corporation
Developed By Paprhihost.com
ThemesBazar-Jowfhowo