এর আগে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় দ্বিতীয় দিনের উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেন সন্দ্বীপের ইউএনও সম্রাট খীসা।
ইউএনও বলেন, ঘটনার পর থেকে স্থানীয়দের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড ও নৌ-বাহিনী উদ্ধার অভিযান শুরু করে। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের অভিযানেও নিখোঁজ তিন শিশুকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তাই সন্ধ্যায় অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। শুক্রবার সকাল থেকে তৃতীয় দিনের অভিযান শুরু হয়েছে।
বুধবার সকালে চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ নৌ রুটের গুপ্তছড়া ঘাটের কাছাকাছি স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
গুপ্তছড়া ঘাটের ইজারাদার মোহাম্মদ আনোয়ার জানান, কুমিরা ছেড়ে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটের কাছাকাছি আসতেই কালবৈশাখী ঝড়ের কবলে স্পিডবোটটি। বোটে ২০ জন যাত্রী ছিলেন। এর মধ্যে ১৬ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। পরে আনিকা নামে এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। এখন পর্যন্ত তিন শিশু নিখোঁজ রয়েছে। ভালো আবহাওয়ার মধ্যেই স্পিডবোটটি ছেড়ে আসে।
নিখোঁজ তিন শিশু হলো- আদিবা, আলিফা ও মনির হোসেন সৈকত। এর মধ্যে আদিবা ও আলিফা একই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো আনিকার বোন। ঘটনার পর ১০ বছর বয়সী আনিকার লাশ উদ্ধার করা হলেও মেলেনি ছয় বছর বয়সী আদিবা ও আলিফার সন্ধান।
জানা যায়, কয়েকদিন আগে ওমান যেতে চট্টগ্রামে আসেন সন্দ্বীপের মগধরা ছয় নম্বর ওয়ার্ডের মমতাজ সুকানি বাড়ির মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। প্রবাসী বাবাকে বিদায় জানাতে মামার সঙ্গে শহরে এসেছিল তিন বোন আনিকা, আদিবা ও আলিফা। বাবাকে বিদায় জানিয়ে বাড়ি ফেরার পথেই দুর্ঘটনার শিকার হয় তারা।
এদিকে, তিন শিশুকে হারিয়ে পাগলপ্রায় তাদের মা পান্না বেগম। ঘটনার পর থেকে গুপ্তছড়া ঘাটে এসে আহাজারি করছেন তিনি। শিশুদের উদ্ধারে কখনো নিজেই নদীতে নেমে যেতে চাইছেন, আবার কখনো হাত দিয়ে দুর্ঘটনাস্থল দেখিয়ে ভেঙে পড়ছেন কান্নায়।
একই অবস্থা ১০ বছর বয়সী শিশু মনির হোসেন সৈকতের বাবা সমীর হোসেনেরও। চট্টগ্রাম থেকে স্ত্রী, পাঁচ বছরের মেয়ে ও ১০ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে স্পিডবোটে সন্দ্বীপে নিজ বাড়িতে যাচ্ছিলেন সমীর। দুর্ঘটনার পর নিজে সাঁতরে তীরে ওঠে আসেন। পরে স্ত্রী, মেয়ে ও আরো তিন যাত্রীকে উদ্ধার করেন। কিন্তু ছেলে মনির হোসেন সৈকতকে উদ্ধার করতে পারেননি।
ঘটনার পর থেকে এদিক-ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনিও। তার আশা- জীবিত হোক বা মৃত, উদ্ধার হবে আদরের সন্তান সৈকত।