ইদানীং ফেসবুকে অনেকেই রামাদান শব্দ নিয়ে কটুক্তি বা তামাশা করতে দেখা যায়।তাদের বক্তব্য হলো- রমজান কে যারা রামাদান বলেন, তারা অজু না বলে অদু, কাজী না বলে কাদী বলেন না কেনো? অথচ এগুলো যে কুরআনের কিংবা আরবি শব্দ নয়; সেগুলো হয়তো তাদের জানা নেই! আজকের লেখায় আমি রমজান এবং রামাদান দুটো শব্দের ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ সম্পর্কে আলোচনা করবো, নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে।
রমজান এবং রামাদান বাংলা ভাষায় দুটি শব্দেরই প্রচলন রয়েছে। আমাদের সমাজে রামাদানের তুলনায় রমজান শব্দের ব্যবহার অনেক বেশি প্রচলিত। রমজান শব্দটি ফারসি।ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের মূল স্রোত যখন প্রথম আসে, তখন তা ছিল প্রবলভাবে পারস্য ভাবধারায় প্রভাবিত। আর ফার্সিতে যেহেতু শব্দটা রমজান – যেখানে জ-য়ের উচ্চারণটা Z-র মতো – তাই ভারতীয়রাও রমজান শব্দে অভ্যস্ত। ফারসিতে “দোয়াদ” এর উচ্চারণ জোয়া এর মতো -যেমন আরবি “কাদী” শব্দকে কাজী ,হদরত কে হজরত,অদু কে ওজু এ ধরনের আরো অসংখ্য ফারসি শব্দের সমাহার ঘটেছে বাংলায়। একসময় ভারতীয় উপমহাদেশে ফারসি এবং উর্দুর প্রভাবে সুরা ফাতেহার “দোয়াল্লিন” শব্দকে অনেকেই “জোয়াল্লিন” উচ্চারণ করতেন ফারসি ভাষার প্রভাবেই। কিন্তু কুরআনের “দোয়াদ” শব্দকে “জোয়াদ” পড়াটা অবশ্যই শতভাগ ভুল এবং ভুল। কেহ যদি দোয়াল্লিন এর জায়গায় সুস্পষ্টভাবে জোয়াল্লিন উচ্চারণে তিলাওয়াত করেন তাহলে তার সালাত (নামাজ) ফাসিদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এবার আসি, মুল কথায় কেউ যদি রমজান, রামাজান,রমযান বলেন তাহলে সেখানে আমাদের কোনো আপত্তি নেই ;বরং বাংলা ভাষায় রমজান শব্দের প্রয়োগই বেশি।
কিন্তু যারা রামাদান বলেন কিংবা লিখেন, তাদের শব্দপ্রয়োগকে ভুল বলার কোনো কারণ নেই। কারণ রামাদান শব্দটি কুরআনের শব্দ এবং রামাদান বলাটাই সর্বোত্তম। কেননা রামাদান শব্দটি কোরআনের শব্দ। যার বিশুদ্ধ উচ্চারণের তাগিদ কোরআন ও হাদিসে রয়েছে। যেমন—রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কোরআন তিলাওয়াত করো আরবদের সুর ও উচ্চারণ অনুসারে।’ (বায়হাকি, হাদিস : ২৪০৬)।
সুতরাং কেউ যদি কোরআনে ব্যবহৃত শব্দসমূহের বিশুদ্ধ উচ্চারণের দাবি করে, কিংবা সেভাবে লিখেন ও বলেন,তা অবশ্যই সম্মানযোগ্য। শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে কুরআনের ভাষা ব্যবহার ও শুদ্ধিকরণের প্রবণতা এখন প্রবল। তাদের এই প্রচেষ্টা অবশ্যই প্রশংসিত।যেমন,নামাজ, রমজান,বেহেশত,দোযখ ইত্যাদি কুরআনের শব্দের সঠিক উচ্চারণ সালাত,, জান্নাত,জাহান্নাম রামাদান বলাই যুক্তিযুক্ত এবং সাওয়াবের কাজ।
সবশেষে যে কথাটি বলতে চাই, তাহলো ধর্মীয় শব্দের ক্ষেত্রে কুরআনের শব্দের ব্যবহারই উচিৎ এবং যথার্থ।সুতরাং কেউ চাইলে রমজান, রোজা ইত্যাদি শব্দের ব্যবহার করতে পারেন, তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু কেউ যদি কুরআনের শব্দের সঠিক উচ্চারণ এবং ব্যবহার করে থাকে তাহলে তা অবশ্যই প্রশংসিত এবং সঠিক।