শ্রমিক দিবসের দিন বলেছিলেন ২০ মে সিদ্ধান্ত জানাবেন। এরপর থেকে অনেকটাই ‘টক অব দ্য সিলেট’- কি ঘোষণা দিবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী? সেই ১ মে থেকে অপেক্ষা নগরবাসীর। এতদিন বিভিন্ন সময়ে তার নানা বক্তব্য ও কর্মকান্ডে তাকে নিয়ে নগরবাসীর কৌতুহল বেড়েছে কয়েকগুণ। অবশেষে আজ তার সিদ্ধান্ত দেয়ার দিন। তবে কি সেই সিদ্ধান্ত। আরিফ কি দলীয় আনুগত্য মেনে নির্বাচন বর্জন করবেন, না নানামুখী চাপ উপেক্ষা করে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করবেন? সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে আজ।
ইতিমধ্যে নির্বাচন অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের ৪ বারের কাউন্সলর ও নগর বিএনপির প্রভাবশালী নেতা রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। তার সেই সংবাদ সম্মেলন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। অনেকে বলছেন, কেন্দ্রীয় কমিটির ফেসবুক থেকে লোদীর সংবাদ সম্মেলন প্রচার আরিফের ওপর চাপ প্রয়োগেরই কৌশল!
এই ২০দিন আরিফ সার্বিক বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন। নানা জনের মতামত নিয়েছেন। লন্ডনে গিয়ে তারেক রহমানের সাথেও দেখা করেছেন। দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আজ তার মতামত দেয়ার পালা। এই মতামত সিলেটের রেজিস্ট্রারী মাঠে নগরের মানুষ ও দলের নেতাকর্মীদের সামনেই জানাতে চান। এজন্য তিনি গণসমাবশেরও প্রস্তুতি নিয়েছেন। এখন প্রশ্ন হলো- মেয়র আরিফ কী সিদ্ধান্ত জানাবেন। কাল পর্যন্ত এ ব্যাপারে তিনি মুখ খুলেন নি। আকার-ইঙ্গিতেও বুঝার উপায় নেই কি বলতে যাচ্ছেন তিনি।
নির্বাচন করতে পারেন, আবার না-ও করতে পারেন। মেয়র আরিফ সরে গেলে লড়াই করার মতো অন্য কোনো প্রার্থীর উপস্থিতি সিলেটে নেই। সেটিও এখন ভাবাচ্ছে তাকে। বিকল্প প্রার্থী থাকলে তার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সহজ হতো বলে জানিয়েছেন তার ঘনিষ্টজনরা।
দলীয় সিদ্ধান্ত তার জন্য যেন সাপে বর করেছে। সিলেট বিএনপিতে তার বিরোধীরাও দলের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে উঠেপড়ে লেগেছে। নগর বিএনপি নেতারা তো প্রকাশ্যেই আরিফের প্রতি নির্বাচন না করার ইংগিত দিচ্ছেন। তাদের কর্মকাণ্ড কঠিন পরীক্ষায় ফেলে দিয়েছে আরিফকে। তবে যে সিদ্ধান্তই নেবেন তার সমর্থিত বিএনপি’র অংশের নেতারা মাঠে থাকবেন বলেই ধারনা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার রাতে যখন মেয়র আরিফের বাসার অফিসে নিরাপত্তার থাকা আনসার সদস্যদের সরিয়ে নেয়া হয় তখনও তার ঘনিষ্ঠজন বিএনপি নেতারা ছুটে গিয়েছিলেন। মধ্যরাত পর্যন্ত তারা আরিফের বাসায় অবস্থান করেন। তবে সেদিন সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের দেখা যায়নি।
আজকের রেজিস্ট্রারী মাঠের মতবিনিময় সভাটি হবে তার জন্য আরেকটি পরীক্ষা। ওখানে তিনি নির্বিঘ্নে মতবিনিময় সভা করতে পারবেন কী না- এ নিয়েও প্রশ্ন আছে। গতকাল এর আভাস মিলেছে। মেয়র রেজস্ট্রারি মাঠে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে লিখিত আবেদন করেছিলেন। তবে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে এই শঙ্কায় তাকে সমাবেশ না করতে অনুরোধ করা হয়েছে। শুক্রবার শেষ বিকেলে রেজিস্টারী মাঠে তাকে প্রবেশেও বাধা দেয়া হয়েছে। এরপর অনড় অবস্থানের ঘোষণা দেওয়ার পর সিদ্ধান্ত পাল্টায় পুলিশ। এ সময় নাগরিক সভা করার অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত ফটকের সামনেই অবস্থান করবেন বলে ঘোষণা দেন তিনি। খবর পেয়ে তার সমর্থকরা নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে সেখানে আসতে থাকেন। এ অবস্থায় পুলিশ আগের সিদ্ধান্ত বদলে মেয়রকে সভা করার অনুমতি দেয়। সন্ধ্যায় জানা গেছে, আজ বেলা ৩টায় রেজিস্টারী মাঠে সংবাদ সম্মেলন ও সমাবেশ করবেন আরিফ।
আরিফের অনুসারীরা মনে করছেন, নিজ দল ছাড়া ক্ষমতাসীনদের দ্বারাও পদে পদে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন আরিফ। আর এই বাধা তার নিজের মনের মাঝেও ভোট নিয়ে নানা শঙ্কার উদ্রেক করেছে । এরই মধ্যে গণমাধ্যমের কাছে ভোটের পরিবেশ নিয়ে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। ইভিএম নিয়ে প্রথম থেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু কোন প্রশ্নের উত্তর যেন মিলাতে পারছেন না আরিফ। পরিস্থিতি বলছে, হাওয়া প্রতিকূলেই থাকবে। ইভিএম-এ ভোট। এ ভোট ব্যবস্থায় আস্থার সংকট আছে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মাঝেও। এ পদ্ধতিতে ভোট ধীরগতিতে চলে। অনেকেরই ফিঙ্গার প্রিন্ট মিলেনা। এমন অবস্থা হলে তার কিছুই করার থাকবে না। আরিফ জানিয়েছেন- এক লাখের মতো ভোটারের ফিঙ্গার ম্যাচিং হবে না। সুতরাং তারা ভোট দিতে পারবেন না।
এ অবস্থায় আরিফ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়েছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যদি নির্বাচন করেন-তবে কি শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দলের সাথে একা লড়াই করে ঠিকে থাকতে পারবেন? এতসব শঙ্কা, প্রশ্ন ও দ্বিধা-দ্বন্ধের মাঝে আজ আরিফ কি সিদ্ধান্ত দেন সেদিকেই তাকিয়ে সবাই।
নগারিক সমাজের অনেকে মনে করছেন, আরিফুল হক একজন দক্ষ ও সুচতুর রাজনীতিবিদ। এতদিনে তিনি উন্নয়ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে অনন্য এক অবস্থানে নিজেকে নিয়ে গেছেন। তার যেকোন সিদ্ধান্তে যেমন চমক থাকবে, তেমনি নগরবাসীরও ব্যাপক কৌতুহল থাকবে থাকবে- এটাই স্বাভাবিক। এখন দেখার পালা আজ কি চমক উপহার দেন সিলেটের রাজনীতির এ ‘ম্যাজিক ম্যান’