আর কত ঘুমাবি? ওঠ তাড়াতাড়ি।
আরেকটু ঘুমুই না মা? প্লিজ।
নাহ! আর ঘুম না। আরেকটু দেরি হলে বাস মিস করব। এমনিতেই সাড়ে ছয়টা বেজে গেছে। সাতটায় বাস। তাড়াতাড়ি মা আমার।
আম্মু…
না এখন আর আম্মু আম্মু না। বাস মিস হয়ে গেলে স্কুলও মিস হবে। গত সপ্তাহেও দুইদিন মিস হয়েছে।
তানিশার আম্মু তানিশাকে ঘুম থেকে ডেকে তুললেন।
ছোট্ট তানিশা আড়মোড়া ঘুম ভেঙ্গে কাঁদো কাঁদো গলায় মাকে বলল, কোনোদিন ঘুমাতে পারি না। প্রতিদিন স্কুল স্কুল।
হ্যাঁঁ, স্কুল। পড়াশোনা করে যে গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে।
তানিশা বলল, বাহ! আমি তো রোজই গাড়ি চড়ি।
হ্যাঁ চড়ো সেইটা ঠিক। পড়াশোনা করো এজন্য চড়ো।
কিন্তু মা, একটা প্রশ্ন ছিলো।
কী প্রশ্ন?
ঘোড়া চড়লাম না কেন আমি?
হা হা হা। ঘোড়া চড়ার বয়স হয়নি তাই।
কেন মা? আমি ক্লাস ওয়ানে পড়ি। এই দেখ কত্ত লম্বা হয়েছি আমি।
আচ্ছা আরেকটু লম্বা হলেই বিয়ে দিয়ে দেবো। তখন ঘোড়ায় চড়ে যাবি।
বললেই হলো? আমি বিয়ে করবই না।
আচ্ছা আচ্ছা করিস না। এখন তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আয়।
তানিশা ওয়াশরুমে ঢুকলো। তানিশার মা তানিশার টিফিন ব্যাগে ভরে দিলেন। বাসা থেলে হেঁটে হেঁটে মেইনরোডে যেতে মিনিট পাঁচেক সময় লাগে। হাতে পাঁচ মিনিট সময় নিয়েই বাসা থেকে বের হলেন তানিশাকে নিয়ে। বাসে উঠিয়ে দিয়ে চলে আসবেন। সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামবেন এমন সময় আচমকা বৃষ্টি শুরু হলো। তানিশাকে সিঁড়িতে দাঁড় করিয়ে তানিশার আম্মু বাসা থেকে একটা ছাতা আর তানিশার জন্য রেইনকোট নিয়ে এলেন। সময় নেই হাতে। এখানেই মিনিট তিনেক নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তানিশাকে রেইনকোট পরিয়ে নিজের ছাতাটা মেলে ধরলেন তিনি।
বৃষ্টি বেড়েই চলছে। মেইনরোডে গিয়ে পৌঁছতে পৌঁছতে সাতটার উপরে বেজে গেছে। তানিশা বলল, আম্মু বাস মনে হয় চলে গেছে। আমরা চলে যাই ফিরে?
তানিশাকে ধমকিয়ে বললেন, না! বাস চলে গেলে আমি নিয়ে দিয়ে আসবো। তবুও স্কুল মিস দেয়া যাবে না।
পাশের হোটেলের একটা ছেলেকে তানিশার আম্মু জিজ্ঞেস করলেন, স্কুলের বাসটা চলে গিয়েছে কি না।
ছেলেটা বলল, যায়নি।
সাতটা বেজে সাত মিনিট। বাস লেইট করলে পাঁচ মিনিট লেইট করার কথা। এখনও আসছে না বাসটা। হোটেলের ছেলেটার দিকে তানিশার আম্মু একটা সন্দেহের চোখে চাইলেন। ছেলেটা মিথ্যা বলেনি তো?
তানিশা বলল, আম্মু বাস মনে হয় চলে গেছে। আমরা বাসায় ফিরে যাই?
তোকে একবার বললাম না, বাস চলে গেলে আমরা অন্য গাড়ি দিয়ে যাব। তবুও স্কুল মিস দিব না।
বৃষ্টিও বাড়ছে। তুমুল বৃষ্টি। সাথে বাতাসও হচ্ছে। তানিশাদের সামনে দিয়ে একটা বাইসাইকেল চলে গেল। সাইকেলের সামনে বসা তানিশার বয়সী একটা মেয়ে। বৃষ্টি বাড়ায়, তারাও তানিশাদের পাশে দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালো। বাসের অপেক্ষায় তানিশা আর তার আম্মু দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের পাশে এসে দাঁড়ানো লোকটা বৃষ্টিতে প্রায় ভিজে গেছে। মেয়েটার মাথায় ছাতা ছিলো বলে ভিজেনি সে। মেয়েটি তার ব্যাগ থেকে খাতার একটা পৃষ্ঠা ছিড়ে লোকটিকে বলল, বাবা বাবা, একটু নীচে নামো।
কেন মা?
নামো আগে। বলছি।
মেয়েটি কাগজ দিয়ে বাবার মাথা মুছে দিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিলো।
বৃষ্টি আচমকাতেই শেষ। হালকা রোদ এসে হাসির ঝিলিক দিলো। সেই বাবা মেয়ে সাইকেলে করে আবার চলে গেল।
তানিশা তার আম্মুকে কাছে টেনে গালে একটা আদর দিয়ে বলল, আমিও তোমায় খুব ভালোবাসি আম্মু।
বাস চলে এসেছে। তবে লেইট করেছে বিশ মিনিট। কারণ জানতে চাইলে বলল, বৃষ্টির জন্য লেইট হয়েছে। তানিশাকে বাসে তুলে দিলেন তানিশার আম্মু। হাত নাড়িয়ে বিদায় জানাল তানিশা।
আচমকাতেই সূর্য আরও তেজ নিয়ে এলো। এই সূর্যটা তানিশা আর সেই মেয়েটার আদরের আবহ। মায়াকাননের পুষ্পে ভালোবাসা সেখানে অতি নগন্য তবে পবিত্র। তানিশার মুখে একটুকরো হাসির ঝিলিক চলে এলো। সূর্য থেকে আসা একটুখানি রোদের ঝিলিকের মতো।